দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের তীব্রতা কিছুটা কমায় বিশ্বে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তির ছাপ পড়তে শুরু করলেও নতুন করে আরেকটি ভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে আর তা হলো মাঙ্কিপক্স!
ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৪টি দেশে এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। ইউরোপের ১০টি দেশের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়।
১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার ১১টি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত শনাক্ত হয়। আফ্রিকার বাইরে রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এতোদিন পর্যন্তও বিরল ছিল। ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা যায় নাইজেরিয়ায়। ইউরোপে এবার প্রথম আক্রান্ত শনাক্ত হয় গত ৭ মে। নাইজেরিয়া হতে ইংল্যান্ড ফেরত এক ব্যক্তি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হন বলে জানিয়েছে দেশটি। তারপর এই রোগটি আরও কয়েকটি দেশে শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। এটি স্পষ্ট যে, মাঙ্কিপক্স যদিও কোভিডের মতো নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এর আচরণ বেশ অস্বাভাবিক। কারণ এই প্রাদুর্ভাব অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ব। যা বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে তুলেছে।
এতোদিন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের আচরণ অনুমান করা বেশ সহজ ছিল। নাম শুনে বানরের কথা মনে হলেও আসলে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি পাওয়া গেছে ইঁদুরের শরীরে। মূলত এই ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি পশ্চিম আফ্রিকা ও রেইনফরেস্টে বাস করে এমন কেও হয়তো আক্রান্ত ইঁদুরের সংক্রমণে এলে অসুখটি ছড়ায়। আক্রান্তদের ত্বকে বসন্তের মতো ফুসকুড়ি দেখা দেয়। ফোস্কার মতো তৈরি হয়ে ফেটে যায় ও চামড়া উঠতে থাকে। তবে মাঙ্কিপক্স এখন যেসব দেশে শনাক্ত হচ্ছে সেখানে এটি থাকার কথায় নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, ভাইরাসটি খুব অল্পতেই সংক্রমিত করতে পারছে না। দীর্ঘক্ষণের সংস্পর্শ দরকার পড়ছে। বিশ্বে ইতিপূর্বে অল্প কিছু সংক্রমণ পাওয়া যায়, তবে যাদের শরীরে এটি পাওয়া গেছে তারা সবাই ভাইরাসটির প্রাকৃতিক আবাসভূমি যে সকল দেশে সেখানে ভ্রমণে গিয়েছিলেন। তবে এবার যে প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে তা প্রথম বারের মতো এমন সব মানুষের দেহে এটি পাওয়া যায় যাদের সঙ্গে পশ্চিম বা মধ্য আফ্রিকার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও নেই। যে কারণে কীভাবে তারা আক্রান্ত হয়েছেন সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি যৌন সংসর্গের মাধ্যমেই ছড়াচ্ছে। বেশির ভাগ আক্রান্তের শরীরেই ঘায়ের মতো পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তদের অনেকেই সমকামী এবং উভকামী কম বয়স্ক পুরুষ। তবে এটিই একমাত্র কারণ তা কিন্তু নয়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিজ্ঞান বিষয়ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক স্যার পিটার হরবি বিবিসিকে বলেছেন, আমরা খুব নতুন এক ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। যা খুব বিস্ময় ও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই।
তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় এক কোভিড মহামারিতে পড়তে চলেছি বিষয়টি আসলে এমন নয়। তবে ভাইরাসটি জেঁকে বসার আগেই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. হিউ অ্যাডলার। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, এর যে আচরণ আমরা এখন দেখছি তা আগে কখনও দেখা যায়নি। যা আশ্চর্য হওয়ার মতোই। এখন পর্যন্ত এটুকু জানা যাচ্ছে যে, এই প্রাদুর্ভাব ব্যতিক্রমী তবে কেনো সেটি জানা যাচ্ছে না। দুটি বিকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে। হতে পারে এই ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়েছে। বা ভাইরাসটি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সঠিক সময় ও উৎকৃষ্ট পরিবেশ পেয়েছে। তবে মাঙ্কিপক্স কোভিডের মতো এতো দ্রুত মিউটেড কিংবা ধরন পরিবর্তন করে না।
ডা. হিউ অ্যাডলার বলেন, গুটি বসন্তের যুগের চেয়ে এটি সম্ভবত দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়াচ্ছে। তবে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই যে, এটি ব্যাপকহারে ছড়াবে। তিনি এখনও মনে করছেন যে, এই প্রাদুর্ভাব নিজে নিজেই শেষ হয়ে যাবে।
এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, মাঙ্কিপক্স পরিচিত অন্যসব ভাইরাস ও স্মলপক্সের টিকা এর বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর বলে পরীক্ষায় দেখা যায়। তবে কীভাবে এই প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে সেটি জানতে পারলে হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। তথ্যসূত্র: বিবিসি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
Bengali 
English