দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিক্ষকদের সঙ্গে ঠিক একই সময় বেশ কয়েকটি ঘটনা সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে। গত কয়েক দিনের ঘটনার ধরণ অনেকটা একই রকম।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ঘোষণা আসার পর দেশে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিলো। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ওই সময় আরও কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে দেশে। পর পর দুটি ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যে কারণে এইসব ঘটনাকে নাশকতা হিসেবে দেখা হতে থাকে। যদিও সেই বিষয়গুলো এখন প্রায় থেমে গেছে। কারণ পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার পর সেই বিষয়গুলো ধামা চাপা পড়ে গেছে অনেকটা।
তবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে নাশকতার গন্ধ থাকলেও শিক্ষকদের উপর আক্রমণের ঘটনা কিন্তু নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও এমন ঘটনা নাশকতার নয় বলা যায়। তবে তারপরও প্রশ্ন এসেই যায়। বিশেষ করে সাভারের শিক্ষকদের পিটিয়ে হত্যা, নড়াইলে শিক্ষকদের জুতোর মালা পরানোর মতো নিকৃষ্টতম কাজগুলো ঘটেছে একই সময়। আরও ঘটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের ক্লাস চলাকালীন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠেছে। প্রায় একই সময় একই ধরনের ঘটনার সূত্রপাতকে কিভাবে কাকতালীয় ভাবা যাবে?
প্রথম ঘটনাটির কথা প্রকাশ পায় গত ১ এপ্রিল। সেটি ঘটেছিলো শরিয়তপুরে। শরীয়তপুরের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি দ্বারা ওই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে মারধর বা লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটে।
তবে পরবর্তী ৩টি ঘটনা একই সময় ঘটেছে। সাভারে শিক্ষককে ছাত্র কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। পরে দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠলে প্রথমে ওই অভিযুক্ত ছাতে জিতুর বাবাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারপর অভিযুক্ত জিতুও গতকাল গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হয়।
আরেকটি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, শত শত পুলিশ এবং মানুষের মধ্যদিয়ে একজন মানুষ হেঁটে আসছেন, তার গলায় জুতার মালা ও হাত দুটি ক্ষমা প্রার্থনার মতো করে উত্তোলিত।
নড়াইলে কলেজ অধ্যক্ষকে পুলিশের সামনেই গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় সারাদেশের মানুষের মনে ক্ষোভ-লজ্জা ও অপমানে প্রতিটি বিবেকমান মানুষ যেনো ক্ষত-বিক্ষত।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ক্লাস চলাকালীন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে একই বিভাগের মাস্টার্সের আসিক উল্লাহ নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (২৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অ্যাকাডেমিক ভবনের আইন বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে ঘটে এই ঘটনা। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক ড. বেগম আসমা সিদ্দিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ক্লাস চলাকালীন আশিক তার মাস্টার্সের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওই শিক্ষকের নিকট আসেন। তখন তিনি ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘এগুলো আমার বিষয়ই নয়, এগুলো বিভাগীয় চেয়ারম্যানের বিষয়।’ এটা বলে তিনি ক্লাস থেকে বের হতে চাইলে ক্লাসের দরজা বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থী আশিক উল্লাহ। এতে করে ক্লাসের ভিতরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্ষেপে যান ও শিক্ষককে বের করে বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমে তখন পৌঁছে দেন।
এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বিভাগের সামনে অবস্থান গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটি এবং সিন্ডিকেট রিপোর্ট সাপেক্ষে ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
তবে একই সময় একই ধরনের অর্থাৎ শিক্ষকদের উপর আক্রমণের ঘটনা পুরো জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। যদিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কোনো বিষয় এগুলো নয়।
আরেকটি ঘটনা ঘটেছিলো শিক্ষাভবনে। সেখানে এক শিক্ষক লাঞ্ছিত হন। ঘুষ নিয়েও কাজ করে না দেওয়ায় প্রতিবাদ জানানোয় শিক্ষাভবনের কর্মচারীর হাতে গত এপ্রিল মাসে লাঞ্ছিত হন মো. আমিনুর রহমান নামে জনৈক শিক্ষক। তবে দুইমাস পেরিয়ে গেলেও সে বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযুক্ত কর্মচারী সৈয়দ লিয়াকত আলীও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। শিক্ষক লাঞ্ছিত করার ঘটনার বিষয়টি শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ প্রকাশিত হয়েছিলো। শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ওই সময় মহাপরিবচালক ছুটিতে দেশের বাইরে ছিলেন। ফিরে এলেও তাকে বিষয়টি জানননি পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী এবং উপ-পরিচালক বিপুল কুমার বিশ্বাস। মহাপরিচালক অন্যভাবে বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত কর্মচারী লিয়াকতের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ। গত সোমবার অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় মহাপরিচালক জানতে চান, ‘শিক্ষা ভবনে কাজে আসা শিক্ষকের গায়ে কেনো হাত তোলা হলো? কেনো লিয়াকতের সঙ্গে আরও দুএকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করতে গেলো? তারাই বা কারা? কেনো লিয়াকতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শাস্তির প্রথম ধাপ হিসেবে তাকে ঢাকার বাইরে বদলি করার কথাও ছিলো।
নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে শিক্ষক লাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক মাহাবুবুর রহমানের উপর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবু কর্তৃক অতর্কিত আক্রমণ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ওয়াহেদ সাদত বাবু নামে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাকে নিজ বাসার সামনে থেকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ।
এইসব ঘটনা দেশে তো বটেই জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারেও আমাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। জাতির এই অধপতন রোধে সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।
Bengali 
English