দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মুখে সংক্ষিপ্ত হামলার কথা বললেও সিরিয়ার বিরুদ্ধে জোরালো ও দীর্ঘমেয়াদি সামরিক হামলার পরিকল্পনা করছে পেন্টাগন। তবে আপাতত তিনদিনের হামলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে।
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম গুলো বলেছে, মূল পরিকল্পনার চেয়েও সিরিয়ায় জোরালো ও দীর্ঘমেয়াদি সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পেন্টাগন। লাগাতার ৩ দিন স্থায়ী নতুন এ অভিযান পরিকল্পনায় বিমানবাহিনীর বোমারু বিমান ব্যবহারেরও চিন্তাভাবনা চলছে। সংশ্লিষ্ট দুজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকা গতকাল রবিবার এ খবর দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়ায় সম্ভাব্য ‘সীমিত আকারের’ সামরিক হামলার মেয়াদ দুই দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে বিমান হামলার ব্যাপারটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
সংবাদ মাধ্যম আরও বলেছে, মার্কিন ওই দুই কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ওবামা ব্যক্তিগতভাবে সামরিক অভিযানের পক্ষে জনগণের সম্মতি লাভসহ আইনপ্রণেতাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে হামলা পরিকল্পনা জোরালো করা হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের দাবি করেছে, মার্কিন সামরিক সদর দপ্তর- পেন্টাগনের যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীরা সম্ভাব্য লক্ষ্যস্থলগুলোর দিকে অবিরাম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা ভাবছেন। প্রাথমিকভাবে বোমার আঘাত হানার পরপরই অতিরিক্ত হামলার অংশ হিসেবে শুরু হবে ক্ষেপণাস্ত্রের অবিরাম হামলা। ওই দুই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০টি স্থানকে হামলার লক্ষ্যস্থল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে হোয়াইট হাউসের তরফে প্রাথমিক তালিকার পরিধি বাড়িয়ে লক্ষ্যস্থলের সংখ্যা ‘আরো অনেক’ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
পত্রিকাটি জানায়, যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীরা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বর্তমানে মোতায়েন করা পাঁচটি বৃহত্তর রণতরী থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পাশাপাশি বোমারু বিমান ব্যবহারের কথাও ভাবছেন। সে ক্ষেত্রে পরমাণু শক্তিচালিত যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইউএসএস নিমিটজ লোহিত সাগরে অবস্থান নেওয়া তিনটি বৃহত্তর রণতরী ও একটি দ্রুতগামী যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে একযোগে হামলা চালাবে। সেখান থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া যাবে সিরিয়ার দিকে।
তবে এ হামলায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সামরিক সামর্থ্য কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ওই কর্মকর্তাদের একজন বলেন, পরিকল্পিত হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘শক্তি প্রদর্শন’ হবে ঠিকই, রণাঙ্গনের পরিস্থিতির আমূল কোনো পরিবর্তন হবে না। আরেক কর্মকর্তাও স্বীকার করেন, হামলায় ‘সিরিয়ার বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের কৌশলগত প্রভাব পড়বে না।’ তাঁর মতে, ‘পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়টি সিরীয়দের হাতে। আড়াই বছরে গড়ানো সিরীয় গৃহযুদ্ধ আরো দুই বছর চলতে পারে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিরিয়া অভিযানের যথার্থতা তুলে ধরতে আগামীকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ওবামা। এর আগে আজ সোমবার একযোগে তিনটি প্রভাবশালী টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা তাঁর। চ্যানেলগুলো হলো পিবিএস, সিএনএন ও ফক্স নিউজ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে লাগাতার কয়েকটি যুদ্ধের ধকলে ক্লান্ত মার্কিন জনগণের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন ওবামা। এর অংশ হিসেবে ২১ আগস্টের ‘রাসায়নিক হামলার’ ওপর গতকাল ১৩টি ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করেছে মার্কিন সিনেটের ইনটেলিজেন্স প্যানেল। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ১৭০টি ভিডিওচিত্র থেকে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। রাসায়নিক হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরতে ভিডিওচিত্রগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের আশা, এর মাধ্যমে ওবামার প্রস্তাবিত হামলা পরিকল্পনার পক্ষে আইনপ্রণেতাদের সমর্থন বাড়বে, জনমতও পাল্টাবে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, পিটিআই।
উল্লেখ্য, ২১ আগস্টের ওই ‘রাসায়নিক হামলার’ জবাবে সিরিয়ায় হামলা চালাতে চান ওবামা। তবে এখন পর্যন্ত যুদ্ধের বিপক্ষে থাকা আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা অনেক বেশি। বিভিন্ন জরিপে এ চিত্র ফুটে ওঠায় এখন পর্যন্ত ওবামার প্রস্তাবের ওপর কংগ্রেসে ভোটের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। কবে হতে পারে, তারও কোনো আভাস দেওয়া হয়নি।