দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান স্থগিত হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যদি সব রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেয় তাহলে এ হামলা ঠেকানো সম্ভব। সিরিয়াও রাশিয়ার প্রস্তাবে রাজি।
সিরিয়ায় হামলা পরিকল্পনা থেকে ফিরে আসতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এ জন্য তিনি সিরিয়াকে সুযোগ দিয়েছেন। বলেছেন, তারা যদি সব রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে দিয়ে দেয় তাহলে এ হামলা ঠেকানো সম্ভব। ওবামা আশা করেন, সিরিয়া সরকার তা মেনে নেবে। রাশিয়াও সিরিয়াকে একই আহ্বান জানায়। এরপর রাশিয়াও এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়ালেমের। ওয়ালিদ বলেছেন, আমেরিকা যাতে আগ্রাসন চালানোর কোন অজুহাত না পায় তার জন্য তারা রাশিয়ার প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স’কে উদ্ধৃত করে গতকাল এ খবর দিয়েছে রয়টার্স।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ বলেন, রাসায়নিক অস্ত্র সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ দিয়েছিলেন। তা নিয়ে তার সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রাতে আমরা রাশিয়ার ওই উদ্যোগ মেনে নিয়েছি। তিনি রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেন। রাশিয়ার এ প্রস্তাব মেনে সিরিয়া যদি তার রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেয় তাহলে দৃশ্যত অবশ্যম্ভাবী যে যুদ্ধ তা হয়তো এড়ানো যেতে পারে। তবে সিরিয়ায় হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সাবধান করেছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হামলা শুরু করে তাহলে আঞ্চলিকভাবে তার জবাব দেয়া হবে। এমন হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বোকামি হবে। পিবিএস টেলিভিশনের চার্লি রোজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট আসাদ বলেন, আপনারা যদি কোথাও হামলা করতে চান তাহলে তার জবাব দেয়া হবে কোন না কোন স্থান থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে। এ জবাব দেয়া হবে এমনভাবে যা আপনারা প্রত্যাশাও করেননি।
বিবিসি অনলাইন জানিয়েছে, সিরিয়াকে সোমবার রাসায়নিক অস্ত্র ত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ধারাবাহিক টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন কংগ্রেস ও জনতার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। তিনি চান, সিরিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য সেখানে সীমিত আকারে সামরিক হামলা। অভিযোগ আছে, সিরিয়া বিভিন্ন স্থানে বিপুল পরিমাণে রাসায়নিক অস্ত্র জমা করে রেখেছে। কোথায় কোথায় তা জমা করা হয়েছে সিরিয়ার সরকারকে তা জানাতে হবে। এরপর তা যাচাই করা হবে। এ কাজ করতে পারে জাতিসংঘের পরিদর্শকরা। ফ্রান্সও সিরিয়াকে রাসায়নকি অস্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে দিতে আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে। এরপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই অস্ত্রগুলো ধ্বংস করে ফেলা হবে। কিন্তু তা না করলে সিরিয়াকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্ট ফাবিয়াস।
ওদিকে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত করার পক্ষে বারাক ওবামাও। তিনি এবিসি নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা যদি সামরিক অভিযান ছাড়া সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ থেকে বিরত রাখতে পারি তাহলে আমিও সেই পথকে বেশি পছন্দ করি। এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে তিনি চাপ দিয়ে যাবেন। তবে সম্ভাব্য সেই হামলার সময় পরিবর্তিত হয়েছে। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান চালানো হবে কিনা সে বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সিনেটররা আজ প্রথম ভোট দিতে পারেন। কিন্তু প্রস্তাবের পক্ষে টেস্ট ভোট নেয়ার বিষয়টি সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হ্যারি রিডোর নেতৃত্বে স্থগিত হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষ এখনও মনে করেন সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালালে তা যুক্তরাষ্ট্রকে দীর্ঘস্থায়ী এক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে। এতে ওই অঞ্চলের সীমান্তে শত্রুতাও বাড়বে। হামলা চালানোর ক্ষেত্রে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়ার ক্ষেত্রও দৃশ্যত এখন অনেকটা ক্ষীণ। কারণ, প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৩ সদস্যের মধ্যে ২৩০ সদস্যেরও বেশি হয়তো এ হামলার বিরোধিতা করেন অথবা বিরোধিতা করতে পছন্দ করেন। এছাড়া জনমত জরিপ বলে যে, সিরিয়ায় হামলা চালানোর বিরুদ্ধে মার্কিনিরা উদ্বিগ্ন।
এক কথায় বলতে গেলে যুদ্ধের দামামা কেওই দেখতে চাই না। সবাই চাই শান্তির পথে সকল সমস্যার সমাধান হোক। বর্তমান সিরিয়ার পরিস্থিতি দেখে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ অনেকটা আশাবাদি হয়েছেন এই ভেবে যে, অন্তত যুদ্ধের মতো সহিংস দৃশ্য কাওকে দেখতে হবে না। সিরিয়া রাশিয়ার প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় অনেকটাই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছে বিশ্বের শত কোটি মানুষ।