ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ শিক্ষাকে সরকার সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। বাজেটে শিক্ষা খাতে বিশেষ বরাদ্দও রাখা হয়। কিন্তু এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে অথচ শুধুমাত্র আর্থিক সংকটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা যাচ্ছে না এমন খবরও আমাদের পড়তে হয়!
মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে নতুন করে আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সংশ্লিষ্ট খাতে কম বরাদ্দ এবং নতুন এমপিওভুক্তির জন্য অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এ আশংকা তৈরি হয়েছে। নতুন এমপিও খাতে বর্তমান অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছরের বাজেটে এ খাতে ছিল ৩০৬ কোটি টাকা। কিন্তু টাকা খরচ না করায় নতুন বাজেটে এবার প্রথমে ১শ’ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব করেও চূড়ান্ত প্রস্তাবে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। জানা গেছে, জুলাই মাসে এই অর্থেই এমপিও প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার কারণে পরে মন্ত্রণালয় ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তিনি শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা এমপিও দিতে আগ্রহী। যে কারণে সংসদে এমপিদের কাছে তালিকা চাওয়া ছাড়াও প্রাপ্ত আবেদন নিয়ে মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে বেশিদূর আগানো যায়নি। শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, নতুন এমপিও খাতে ১৫ কোটি টাকা রয়েছে। এ অর্থে হয়তো দু’তিন মাসের জন্য এমপিও প্রদান করা যাবে। কিন্তু একবার কাউকে এমপিও দিলে তা আজীবন বহন করতে হয়। সে জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে অর্থ চাওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন জবাব পাওয়া যায়নি। অর্থের সংস্থান হলে এমপিও প্রদান করা হবে।
এমপিওহীন প্রতিষ্ঠান কত?
সর্বশেষ এমপিও প্রদান উপলক্ষে সারাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদন জমা পড়ে ৭ হাজার ৫৩৩টি। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৪ হাজারকে বাছাই করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৬১২টি এমপিও পেয়েছে। আবার সারা দেশে এমপিওহীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ হাজার ৬৯৩টি রয়েছে কোন স্তরেই এমপিওভুক্ত নয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, স্কুল ম্যাপিং, দূরত্ব কিংবা ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা ইত্যাদি বিচারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ার কথা। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই সরকারি বিধিবিধান মেনে প্রতিষ্ঠিত নয়। এর বাইরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিন্তু নিম্নস্তরে এমপিওভুক্ত- এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪ হাজার ৪৩৮টি। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৭ হাজার ৩০৭টি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অব্যবস্থাপনা
এ ব্যাপারে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানালেও কোন কাজ হয় না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত নয়, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। হাইস্কুল আছে যেগুলোর এমপিভুক্ত নয়, তাদের নবম শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশনে অনেক ঝামেলা করতে হয়। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে একশত টাকা নেওয়া যাবে। কিন্তু বাস্তবে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে ৫শ’ টাকা করে দাবি করা হয়। এর প্রতিবাদ করলে রেজিস্ট্রেশনে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। ওই শিক্ষক আরও জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমরা এ বিষয়ে জানিয়েছি তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। তাছাড়া আমরা লিখিত জানালে দেখা যাবে আমরা রেজিস্ট্রেশনই করতে পারছি না। তাই এমপিওভুক্ত করতে মন্ত্রণালয়কে আরও কঠোর হওয়া দরকার বলেও মন্তব্য করেন ওই শিক্ষক।