ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ আসলে ঘটনা কি ঘটেছে তা হয়তো কেওই জানেন না। কিন্তু জনমনে সেই একই প্রশ্ন আবারও দানা বেঁধেছে, আর তা হলো বিএনপি নেতা নিখোঁজের ঘটনা কি আবারও গুমের ঘটনার পুনরাবৃত্তি? আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অন্যতম সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজের ঘটনা।
২২ এপ্রিল দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল
১৭ এপ্রিল গভীর রাতে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী। এ ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে বিএনপি। পরদিন ১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে তারা। সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৯ এপ্রিল ডাকা হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। একই সঙ্গে ইলিয়াস আলীর সন্ধান দিতে ব্যর্থ হলে ২২ এপ্রিল সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
ফখরুল বলেন, সরকার নির্যাতনের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। এর ফলে গণতন্ত্র ধ্বংস হতে পারে। ’৭২-৭৫ সালেও একই কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। সে সময় ৩৬ হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সারাদেশে বিক্ষোভ হয়েছে। সিলেট অচল হয়ে গেছে। বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বক্তব্য
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলেছে, তাদের কেউ এম ইলিয়াস আলীকে গ্রেফতার বা আটক করেনি। আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের কেও ইলিয়াস আলীকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। দুর্বৃত্তরা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে চলছে সর্বোচ্চ চেষ্টা। অপরদিকে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মোঃ সোহায়েল বলেন, র্যাবের কেও ইলিয়াস আলীকে গ্রেফতার বা আটক করেনি। অভিযোগ আসার পর উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রীর বক্তব্য
১৮ এপ্রিল সকালে এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তার বনানীর বাসায় সাংবাদিকদের জানান, ১৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুই জন লোককে নিয়ে তার স্বামী বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর গভীর রাত পর্যন্ত তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাত দেড়টার দিকে বনানী থানা পুলিশ বনানী ২নং রোড থেকে ইলিয়াস আলীর পরিত্যক্ত গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-২৯৪৪১৫) উদ্ধার করে তাকে খবর দেয়।
খবর শুনে ১৮ এপ্রিল সকালে এম ইলিয়াস আলীর বনানীর বাসায় যান বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। এ সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি সরকারের তরফ থেকেই এম ইলিয়াস আলীকে তুলে নেয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে তাকে ফিরিয়ে দেয়া না হলে কঠোর ও লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের সঙ্গে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার মিল রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গুম কিংবা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ইতিপূর্বেও অনেক হয়েছে। চৌধুরী আলম দীর্ঘদিন নিখোঁজ রয়েছেন। সুতরাং বিষয়টিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা ইলিয়াস আলীর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব- সবার বাসায় খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কোনো খোঁজ পাইনি। ইলিয়াস আলীর মতো নেতারা যদি গুম কিংবা নিখোঁজ হয়ে যান, তাহলে এদেশে রাজনীতির মৃত্যু হবে। আমরা এর অবসান চাই।
স্ত্রীর জিডিতে যা বলা হয়েছে
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী মঙ্গলবার রাতে তার বনানীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা বাদী হয়ে বুধবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি-নম্বর-৪০৩) দায়ের করেন। পুলিশের গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) খন্দকার লুৎফুল কবির যুগান্তরকে জানান, বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা জিডিতে উল্লেখ করেছেন, বনানী ২/১ নম্বর সড়কের ৩ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় তারা সপরিবারে বসবাস করেন। মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার স্বামী ইলিয়াস আলী চালক আনসার আলীকে সঙ্গে নিয়ে (ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৪৪১৫) করোলা ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কারযোগে বাসা থেকে বের হন। রাত দেড়টার দিকে বনানী থানা পুলিশ তাকে (তাহসিনাকে) ফোন করে জানায়, বনানী দুই নম্বর সড়কের সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে একটি পরিত্যক্ত প্রাইভেট কার পাওয়া গেছে। গাড়িটি তাদের কিনা জানতে চাইলে তাহসিনা নিশ্চিত করেন গাড়িটি তাদের।
এ ধরনের নিখোঁজ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকে সকলেরই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। কারণ এই কালচার গুলো আমাদের দেশের রাজনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। তুচ্ছ কারণে যেমন সরকারকে দোষারোপ করা ঠিক নয়, তেমনি সরকারেরও উচিত এমন সব ঘটনার সঠিক তদন্তের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরা। যাতে আর কেও এমন ঘটনার শিকার না হন। কারণ এই কালচার অদূর ভবিষ্যতে এ জাতির জন্য এক অমানিষা হয়ে দেখা দেবে।