দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকের সকালে দাঁতে ব্রাশ করলেই মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, দাঁত থেকে রক্ত পড়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের জটিল এক স্নায়ুর রোগ ‘ডিমেনশিয়া’রও যোগ রয়েছে। তাই প্রথম অবস্থায় তা ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু করতে পারলেই সবথেকে ভালো।
ঘুম থেকে উঠেই দাঁত মাজতে গিয়েই দেখলেন দাঁত মাজার ব্রাশের পালকে রক্ত লেগে রয়েছে। অথচ কোনও চোট কিংবা আপনার কখনও আঘাত লাগেনি! আবার মাড়ির কোনও জায়গায় ব্যথা কিংবা ফোলাও নেই। আবার দাঁতও নড়ছে না। তাহলে এই রক্তপাতের কারণ কী? চিকিৎসকরা বলেছেন, দাঁত থেকে রক্ত পড়ার সঙ্গে মস্তিষ্কের জটিল এক স্নায়ুর রোগ ‘ডিমেনশিয়া’র যোগসূত্র রয়েছে। তাই প্রথম অবস্থায় এটি ধরা পড়লে ও চিকিৎসা শুরু করতে পারলে ভালো। তবে আশার কথা হলো, সময় থাকতে ধরা পড়লে মাড়ির এই রোগ ঠেকিয়ে রাখা যাবে। তবে তার পূর্বে বুঝতে হবে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সঠিক কারণটি আসলে কী।
কীভাবে বুঝবেন মাড়ির কোনও রোগ রয়েছে কি না?
এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, মাড়ি থেকে রক্ত পড়ারও আবার ৪টি পর্যায় হয়। যতো তাড়াতাড়ি এই সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন, রোগ ততো তাড়াতাড়ি সারবে। সুস্থ মাড়িতে আঙুল দিলে বোঝা যায়। অপরদিকে, ‘জিনজিভাইটিস’-এ আক্রান্ত মাড়ি প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিকের চেয়েও একটু বেশি লালচে হয়। মাড়ি ফুলে থাকে, ব্রাশ ঠেকালেই রক্ত পড়তে শুরু করে দেয়।
পরবর্তী পর্যায়ে দাঁতের গোড়া থেকে মাড়ির কিছু অংশ পৃথক করে উঠে আসতে দেখা যায়। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয়, ‘পেরিয়োডনটাইটিস’। আর তখন দু’টি দাঁতের মধ্যবর্তী অংশে ফাঁকা হতে থাকে। এখানেই ব্যাক্টেরিয়া নিশ্চিন্তে বাসা বাঁধতে শুরু করে দেয়।
এর পরের ধাপে ব্যাক্টেরিয়া সরাসরি পৌঁছে যায় দাঁতের গোড়ায়। সেখানকার লিগামেন্ট, তুলনায় নরম টিস্যু ও হাড়ের ক্ষয় হতেও শুরু করে। যে কারণে দাঁতের গোড়া নড়বড়ে হয়ে যায়। ঠিক এই সময় থেকেই দাঁতে ব্যথা ও মুখে দুর্গন্ধ হতে শুরু করে। একেবারেই শেষ পর্যায়ে মুখে সংক্রমণও বেড়ে যায়। দাঁত পড়ে যাওয়া ও দুর্গন্ধের পরিমাণও তখন বৃদ্ধি পায়।
বাড়িতেই কী ধরনের চিকিৎসা করা যেতে পারে?
চিকিৎসা শুরু করার পূর্বেই খুব ভালো করে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন, সমস্যাটি আসলে কোন পর্যায়ে রয়েছে। একেবারে প্রথম দিকে এই ধরনের মাড়ির রোগ বাড়িতেই সারিয়ে ফেলা সম্ভব। এই ক্ষেত্রে ‘ফ্লুরাইড’ যুক্ত মাজন দিয়ে দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজার পরামর্শ দিয়েছে ‘ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস’ (ভারত)। যদি খুব ব্যথা করে, সেই ক্ষেত্রে ওই মাজনটি সরাসরি মাড়ির ওই নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে রেখে দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়াও ২/৩ মাস অন্তর ব্রাশটি বদলে ফেলতে পারলে আরও ভালো হয়। তবে দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে ঝুঁকি না নেওয়াই সমিচিন হবে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org