দি ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ দেশের কাঁসা শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময়ের কাঁসার প্লেট, গ্লাস, বাটি, ঘড়া এখন আর চোখে পড়ে না।
এমন এক সময় ছিল যখন কাঁসার এসব পণ্যের কদর ছিল। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে কাঁসার জিনিসের প্রচলন বেশি। অবশ্য এখন আদি হিন্দুদের মধ্যে কাঁসার জিনিসপত্রের ব্যবহার রয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এখনও এই কাঁসার থালা, বাটি ব্যবহার করেন। বড় কাঁসার থালায় ভাত সাজিয়ে, কাঁসার বাটিতে দরকারি সাজিয়ে খেতে দেওয়া হয়। আলাদা কোন পাত্র সাধারণত ব্যবহার করা হয় না। অন্তত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এরকমই রেওয়াজ রয়েছে। যে কারণে তারা কাঁসার জিনিসপত্র বেশি ব্যবহার করতেন। কিন্তু দিনকে দিন এই কাঁসার প্রচলন একেবারেই উঠে যাচ্ছে। এখন মেলামাইন এবং চিনা মাটির প্লেট এবং কাঁচের গ্লাস এমনভাবে প্রচলিত হয়ে গেছে যে সেগুলোই আধুনিক যুগের সোপান।
উঠে যাচ্ছে কাঁসার প্রচলন
যত দিন গড়াচ্ছে কাঁসার প্রচলনও ততই উঠে যাচ্ছে। এখন কোন বাড়িতে গিয়ে কাঁসার জিনিসপত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না। একমাত্র কিছু গোড়া হিন্দু ধমাবলম্বীদের বাড়িতে হয়তো কিছু কাঁসার জিনিসপত্র চোখে পড়তে পারে। তবে হিন্দুস্থান অর্থাৎ ভারতে এখনও এই কাঁসার জিনিসপত্রের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের কিছু হিন্দু সম্প্রদায় এই কাঁসার জিনিসপত্র এখনও ব্যবহার করেন। পুরান ঢাকার শাখারী পট্টি এলাকায় গিয়ে অন্তত তার প্রমাণ পাওয়া গেলো। শাখারী পট্টির একটি হিন্দু বাড়িতে দেখা গেলো সেই ঘড়া যাকে আমরা এখন জগ বলি। সেগুলোতেই তারা পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। তাছাড়া আধুনিক চিনা মাটির প্লেট তারা এখনও ব্যবহার করেন না। রয়েছে কাঁসার থালা-গ্লাস ইত্যাদি। আমরাও ছোটকালে দেখেছি কাঁসার গ্লাস। এখন সেগুলো আমরা ব্যবহার করি না। অথচ এই সব কাঁসার জিনিসপত্র আমাদের ঐতিহ্য। গ্রাম-গঞ্জে গেলে হয়তো এখনও এইসব কাঁসার জিনিসপত্র চোখে পড়তে পারে।
ধামরাইতে কাঁসা শিল্প
রাজধানী ঢাকার থেকে খুব সন্নিকটে ধামরাই। ঢাকা জেলার মধ্যে হলেও গ্রামাঞ্চল হিসেবেই পরিচিত এই ধামরাই। সেখানে এখনও এই কাঁসা শিল্পের অস্তিত্ব রয়েছে। বেশ কয়েকটি পরিবার আছে এই কাঁসা শিল্পের সঙ্গে। তারা অবশ্য থালা-বাসন তৈরি করেন না। তারা কিছু কাঁসার মুর্ত্তি তৈরি করেন এবং সেগুলো বাজারজাত করেন। যা এখন শুধুই শো-পিস হিসেবে আমরা ঘরে ব্যবহার করে থাকি। এমন কয়েক জনের সঙ্গে আলাপ হয়। তারা জানালেন, তাদের পৈত্রিক ব্যবসা ছিল কাঁসা শিল্পের। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সেসব ব্যবসা এখন বন্ধ। তারা শুধু ঘরের শো-পিস হিসেবে ব্যবহার করা যায় এমন কিছু কাঁসার জিনিসপত্র তৈরি করে বাজারজাত করে থাকেন। নিপেন কুন্ডু জানালেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই শিল্পের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু এখন কাঁসা শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা নামে মাত্র কিছু শো-পিস তৈরি অর্থাৎ কাঁসার মুর্ত্তি এবং নানা ধরনের শো-পিস তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু কোন সরকারি সাহায্য বা কোন প্রতিষ্ঠানের কোন সহযোগিতা নেই। তিনি জানালেন, হয়তো আর ৪/৫ বছর পর এই শিল্পের কোন অস্তিত্বই থাকবে না। সরকারি সাহায্য প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, আমরা কোন ঋণ পায় না বা সরকার এই খাতে কোন সাবসিডি বা অন্য কোন সহযোগিতাও দেয় না। যে কারণে খুব কম সময়ের মধ্যে আমাদের এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই কাঁসা শিল্পের বিলুপ্তি ঘটবে।
আমরা মনে করি গ্রাম-বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এই কাঁসা শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এগিয়ে আসবেন। কাঁসার থালা-বাটি আমরা হয়তো ব্যবহার না করি কিন্তু এই কাঁসা দিয়ে তৈরি শো-পিসসহ আরও অনেক সামগ্রী রয়েছে যেগুলো আমরা দেশ-বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং এর ঐতিহ্য রক্ষা করতে পারি অনায়াসে।