দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাজধানী ঢাকার ফুলার রোডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলের নিজস্ব মিলনায়তনে গত ২ অক্টোবর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কমনওয়েলথ স্কলার্স এনগেজমেন্ট সেশনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ স্কলার্স অ্যান্ড ফেলোসের (বিএসিএসএএফ) আয়োজিত ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় এই সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। এর দ্বিতীয় সেশন আগামী ১৬ নভেম্বর ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈশ্বিক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে ৯৭ কোটি মানুষ মানসিক অসুস্থতা কিংবা মাদক ব্যবহারজনিত সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি ৪ জন মানুষের ১ জন জীবনের কোনো না কোনো সময় মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুপ্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মৃত্যু (১৪.৩ শতাংশ) মানসিক সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।
একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, করোনার বৈশ্বিক মহামারি বাংলাদেশের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে মহামারির আগের সময়ের তুলনায় ৫৭.৯ শতাংশ বিষণ্ণতার প্রাদুর্ভাব, ৫৯.৭ শতাংশ মানসিক চাপ এবং ৩৩.৭ শতাংশ উদ্বেগজনিত সমস্যার প্রকোপ বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সুযোগের সীমাবদ্ধতা, দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর স্বল্পতা, আর্থিক সম্পদের অস্বাভাবিক বন্টন এবং
সামাজিকভাবে প্রচলিত কুসংস্কারের কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উল্লেখজনক হারে অপ্রতুল।
এই বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্বাস্থ্য বিষয়ক সেশনে কমনওয়েলথ স্কলার্স অ্যালামনাইদের এই আয়োজনে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই কমিটির সদস্যরা তাদের দক্ষতা এবং প্রাসঙ্গিকতা প্রকাশে সচেষ্ট এবং তারা সাধারণ জনগণকে বাংলাদেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেন । করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ের বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য সংকট এখন সর্বজন স্বীকৃত।
আজকের সেশনে অংশগ্রহকারীদের প্রচলিত কুসংস্কার কাঠিয়ে ওঠা ও মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতা চিহ্নিত করার উপায়ে বাস্তব জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হবে।”
কমনওয়েলথ ফেলো এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মনিরা রহমান বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর মাস হচ্ছে অক্টোবর। আমাদের বুঝতে হবে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ছাড়া আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবো না। আজ আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অধিকার, সমাজে মানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিতে দাবি জানাই। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এই লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ। ‘সকলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য’; আজ আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছি।”
টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কমনওয়েলথ দেশগুলোর মেধাবী এবং আত্মবিশ্বাসীদের সুযোগ করে দেয় কমনওয়েলথ স্কলারশিপ। যুক্তরাজ্যের ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) অর্থায়নে বেশিরভাগ স্কলারশিপ প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে প্রথম এই কমনওয়েলথ স্কলারশিপ চালু হওয়ার পর ১ হাজার ৮শ’র বেশি বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এই বৃত্তি এবং ফেলোশিপ অর্জন করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক ডিন ও বিএসিএসএএফ এর সভাপতি প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, “ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের সহযোগিতায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই সেশনের আয়োজন করা বিএসিএসএএফ এক্সেকিউটিভ কমিটির জন্য একটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। দেশের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে কমনওয়েলথ স্কলার এবং ফেলোদের মধ্যে পেশাগত যোগাযোগ ও সহযোগিতা জোরদার করতেই এরকম একটি মর্যাদাপূর্ণ অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করা
হয়েছে।”
সেশনে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক, বিএসিএসএএফের (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কমনওয়েলথ স্কলার্স অ্যান্ড ফেলোস) সদস্য, সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org