দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঢাকার ফুলার রোডে অবস্থিত ব্রিটিশ কাউন্সিলে স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ফিল্ডের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশী নারীদের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর একটি সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়।
স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ফিল্ডে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করার লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি জেন্ডার অ্যাসেসমেন্ট ২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের সকল স্টেম পেশাজীবীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুসারে, আগামী দুই দশকের মধ্যে স্টেম বিষয়ক দক্ষতার প্রয়োজন নেই নারীদের জন্য এমন চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে৷ যদিও নারী শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়ে পুরুষ শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো করছে, উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অনেক কম। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র ৩৮ শতাংশ এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাত্র ৪৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী স্টেম বিষয়ে পড়ালেখা করেন।
বাংলাদেশের সামনে বর্তমানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা হতে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক মহামারী এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যসহ বিভিন্ন কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি-নির্ভর বিশ্বে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি দেশের উন্নয়ন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। এবং স্টেম সংক্রান্ত পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
স্বাগত বক্তব্যে ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাড্রিয়ান চ্যাডউইক বলেন, “স্টেম ফিল্ডে লিঙ্গবৈষম্য একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। আমরা নারীদের কর্মজীবনের ৩টি মূল ধাপে (সুযোগ, অগ্রগতি এবং নেতৃত্ব) পরিবর্তন নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করছি। যথেষ্ট সুযোগের অভাব (অ্যাক্সেস) স্টেম ফিল্ডে নারীদের তুলনামূলক কম প্রতিনিধিত্বের অন্তরায়। ২০১৮ সাল থেকে আমরা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেম বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভে দক্ষিণ এশিয়ার ১০০ জন নারীকে সহায়তা করেছি৷ অগ্রগতি নিশ্চিত করতে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করছি এবং স্টেম ফিল্ডের নারীদের পেশাদার উন্নয়নে সহায়ক হবে এমন নীতি বাস্তবায়নে সাহায্য করছি। নেতৃত্বে বিকাশের জন্য আমরা মূল বাধাগুলো শনাক্ত করে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করার উপায় বের করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে দক্ষিণ এশিয়ার এমন ১০০ জন নারীর পথচলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছি আমরা।”
সিম্পোজিয়ামে প্যানেল আলোচনা ও একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গোলটেবিল বৈঠক থেকে প্রাপ্ত ফলাফল গবেষণায় ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, স্টেম ফিল্ডের সাথে জড়িত যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাদের পরবর্তী বছরের কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা পাবেন। ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ও ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ম্যাট ক্যানেল বলেন, “স্টেম ফিল্ডের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশী নারীদের জন্য আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামে সম্ভাবনাময় পেশাজীবীদের মতামত এবং ভাবনা জানতে পেরে আমি আনন্দিত। যুক্তরাজ্যের নতুন শ্বেতপত্র (হোয়াইট পেপার) অনুযায়ী, উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমরা জানি যে, নারীরা প্রযুক্তি-ভিত্তিক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ও সবার জন্য সমতাভিত্তিক টেকসই ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য নারীদের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করতে পেরে আনন্দিত। এই নীতি নারী এবং মেয়েদের তাদের পরিপূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের জন্য ক্ষমতায়ন করবে। আসুন সবাই মিলে ব্যবধান ঘোচাতে কাজ করি এবং এমন একটি ভবিষ্যত তৈরি করি যেখানে লিঙ্গ-বৈষম্য সাফল্যের পথে কোন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।”
প্যানেল আলোচনায় বক্তা হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক হাসিনা খান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোঃ আব্দুস ছামাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ওয়াইল্ড টিমের বোর্ড সদস্য ডাঃ আলিফা বিনথা হক।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি, টেকস্টার স্যাটকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং টেকনো গ্রীন-কার্বন লিমিটেডের চেয়ারপার্সন আনিকা আলী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগ ডঃ মুস্তাক ইবনে আইয়ুব সিম্পোজিয়ামটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ এবং মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org