দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পলাশীর যুদ্ধে ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্যদিয়ে বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়। সেইসঙ্গে বেঈমানির জন্য ইতিহাসে নাম ওঠে রাজবল্লভ, জগেশঠ, মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের। তবে প্রকৃতির নির্মম পরিহাস হলো, শক্রপক্ষ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও তার এই মিত্র ঘসেটিকে বিশ্বাস করেনি!
নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যার পর তার মা আমেনা বেগম, খালা ঘসেটি বেগম, স্ত্রী এবং সন্তানকে আটকে রাখা হয় ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরা প্রাসাদে। মীরজাফর পুত্র মীরনের নির্দেশে নৌকায় তুলে দেওয়া হয় তাদের দুই বোনকে। মাঝ বুড়িগঙ্গায় তারা পৌঁছালে বেঈমানির সবচেয়ে বড় ‘পুরস্কার’ হিসেবে নৌকাটি ফুটো করে দেওয়া হয়েছিলো। পানিতে ডুবে মারা যান ঘসেটি এবং আমেনা বেগম।
জানা যায়, ঘসেটিসহ নবাব পরিবারের বন্দিশালা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া রাজপ্রাসাদটি স্থানীয়দের কাছে ‘ঘোরা’ নামেই পরিচিত। তারা মনে করেন, মূল প্রাসাদই হলো বড় ঘোরা। এছাড়াও অন্যগুলোকে ছোট ঘোরা বলা হয়ে থাকে।
ইতিহাস বলছে যে, কেরানীগঞ্জের জিনজিরা এলাকায় রাজ দরবারের কেরানি এবং কর্মচারীদের বসবাসের জন্য ১৬৮৯ সালে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন বাংলার সুবেদার ইব্রাহিম খা। নবাব ঈসা খাঁ’র আমল থেকে সিরাজউদ্দৌলার আমল পর্যন্ত এই অঞ্চলের ৪০০ বছরের ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করছে এই জিনজিরা প্রসাদটি। কথিত রয়েছে, বর্তমান পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লা থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশ দিয়ে সুরঙ্গ পথে জিনজিরা প্রাসাদে সেনারা আসা-যাওয়া করতো। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পতনের পর হিন্দুস্থান এবং পাকিস্তান তৈরি হলে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অংশ করা হয়েছিলো। এই সময় পুরান ঢাকার ইসলামপুরে নবাববাড়ি এবং লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণ করা হলেও জিনজিরা প্রাসাদটি সংরক্ষণের উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থাৎ বিগত ৫২ বছরেও নবাবদের এই প্রসাদের জমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতারা বহুতল ভবন তৈরি করেছেন।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই প্রাসাদের কয়েকটি কক্ষ এখনও অক্ষতই রয়েছে। এগুলোর নির্মাণশৈলী অবাক করার মতোই। সময় পেলে কেরানীগঞ্জে তার এই বন্দিশালা ঘুরে আসলে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হবে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাঢহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org