দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ থাইল্যান্ডের উপকূল আন্দামান সাগরের গভীরে দৈত্যাকার বিশাল মাথা, বহুবর্ণিল চোখের এক প্রজাতির শার্ক কিংবা হাঙ্গরের সন্ধান পেলো বিজ্ঞানীরা!
কিছুটা ভৌতিক চেহারার হওয়ায় এটিকে ‘গোস্ট শার্ক’ বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। পাখির পালকের মতো এর পাখনা স্বাভাবিক মাছের চেয়ে বেশ ভিন্ন। এটির মাথা দেহের দৈর্ঘ্যের ৩২ শতাংশেরও বেশি।
বিজ্ঞানীরা গভীর সমুদ্রের অধরা এই প্রাণীটি বর্তমানে জীবিত থাকা প্রাচীনতম মাছ হিসেবে দেখছেন। চিমেরিফর্মসের ক্রমানুসারে, ‘গোস্ট শার্ক’ই হলো কার্টিলজিনাস মাছ, অর্থাৎ এর দেহ কঙ্কালের মতো হাড়েও সজ্জিত। এই প্রাচীন মাছগুলোকে হাঙ্গর কিংবা এর দূরবর্তী আত্মীয় বলা হয়ে থাকে।
গত ৬ মার্চ র্যাফেলস বুলেটিন অব জুলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের কথা জানান। গবেষণার প্রধান লেখক ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে স্টেট ইউনিভার্সিটির প্যাসিফিক শার্ক রিসার্চ সেন্টারের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ডেভিড এবার্ট বলেছেন যে, ‘বিশ্বে বর্তমানে চিমেরা প্রজাতির মাছ বিরল।’ গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে দেখা যায়, চিমেরা ছিল এশিয়া মাইনরের লাইসিয়া অঞ্চলের একটি দানবীয় আগুনের শ্বাস-প্রশ্বাসকারী সংকর প্রাণী, যা বিভিন্ন প্রাণীর অংশ নিয়েই গঠিত।
চিমেরাস গভীর সমুদ্রের মহাদেশীয় ঢাল ও সমুদ্রের শৈলশিরাগুলোতেও বসবাস করে। সাধারণত ১ হাজার ৬৪০ ফুট পানির নিচে গভীরতায় পাওয়া যায় এদের। এই ভৌতিক মাছরা অন্ধকার পানিতে লুকিয়ে থাকে। ক্রাস্টেসিয়ানস, মোলাস্ক এবং কৃমির মতো বসবাসকারী প্রাণী এদের খাদ্য।
এরা গভীর সমুদ্রে থাকে বলে ‘গোস্ট শার্ক’ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন- বিশেষ করে আন্দামান সাগরে। এখানকার কিছু অঞ্চলে গভীরতা ১৪ হাজার ফুটও ছাড়িয়ে গেছে। চিমেরার বড় বড় বহুবর্ণিল প্রতিফলিত চোখও থাকে। এর কিছু প্রজাতি ৬.৬ ফুট (২ মিটার) পর্যন্ত লম্বাও হতে পারে।
এর আগে ২০১৮ সালে গভীর সমুদ্রে জরিপ প্রকল্পের অংশ হিসেবে মৃত অপরিণত একটি পুরুষ নমুনা আবিষ্কৃত হযয়েছিলো। বিজ্ঞানীরা আন্দামান সাগরে ভূপৃষ্ঠের ২,৫৩৩ হতে ২৫৪৩ ফুট নিচে থেকে এটি সংগ্রহ করেন। গবেষকরা এটিকে একটি নতুন প্রজাতি হিসাবেও স্বীকৃতি দিয়েছেন।
গবেষণার প্রধান লেখক ডেভিড এবার্ট বলেছেন, বিবর্তনগতভাবে এই চিমেরাগুলো হলো মূলত মাছের প্রাচীনতম বংশগুলোর মধ্যে একটি। এদের বংশ ৩০০ হতে ৪০০ মিলিয়ন বছর পূর্বের। এই নতুন প্রজাতির আবিষ্কার আমাদের বলে দেয় যে, আমরা সামুদ্রিক পরিবেশ সম্পর্কে কতোটা কম জানি ও এখনও কতোটা অনুসন্ধান করা বাকি রয়েছে। তথ্যসূত্র : লাইভ সায়েন্স।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org