ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ প্রায় আড়াই মাস অতিক্রম হলেও চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক সাগর-রুমি হত্যাকাণ্ডের কোন আসামী আজ পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। অবশেষে র্যাব নতুন করে তদন্তের ভার নিয়েছে। এদিকে ভিসেরা সংরক্ষণের জন্য পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য আজ লাশ উত্তোলন করা হবে।
র্যাব তদন্তের ভার নেওয়ার পর আদালতে আবেদন করেছে যে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিহতদের লাশ পুনরায় ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন। র্যাব বলেছে, হত্যার আগে তাদের কোন নেশা বা ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল কিনা তা দেখা দরকার। তাই বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের ৭৫ দিন পর আজিমপুর কবরস্থান থেকে তাদের লাশ আজ ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় উত্তোলন করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কমকর্তা, একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র্যাবের পদস্থ কর্মকর্তা ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করবেন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তাদের ভিসেরা সংরক্ষণের জন্য পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হবে। ২৭ এপ্রিল একই জায়গায় তাদের লাশ ফের দাফন করা হবে বলে র্যাব সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে নৃশংস এ জোড়া খুনের ঘটনার পর ভিসেরা নমুনা সংরক্ষণের জন্য প্রথমবার কেন পুলিশের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে বলা হয়নি। একই সঙ্গে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের কেন একজন জুনিয়র চিকিৎসক দিয়ে ময়নাতদন্ত করা হল, কেন ওই চিকিৎসক দায়িত্ববোধ থেকে লাশের ভিসেরা সংরক্ষণ করেননি- এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতদিন পর লাশ থেকে ভিসেরা নমুনা পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সাগর-রুনীর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডা. সোহেল মাহমুদ ২৫ এপ্রিল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, লাশ তোলার পর অবস্থা দেখে বোঝা যাবে ভিসেরা পরীক্ষার ফলাফল কেমন হবে।
র্যাব সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশে সাগর-রুনীর লাশ কবর থেকে উত্তোলনের ঘটনায় ২৫ এপ্রিল দুপুরে র্যাব সদর দফতরে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট শাহেদুজ্জামানের উপস্থিতিতে মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা ও র্যাব ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড ফরেনসিক উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জাফর উল্লাহর নেতৃত্বে আজ ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টায় আজিমপুর কবরস্থান থেকে লাশ দুটি তোলা হবে। দুপুরের দিকে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে নেয়া হবে। এবার লাশের ভিসেরা পরীক্ষার মাধ্যমে ভিসেরা নমুনা সংরক্ষণ করা হবে। তাছাড়া ফের ময়নাতদন্তে নতুন কিছু তথ্যও মিলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল জানিয়েছেন, সাগর-রুনীকে হত্যার আগে দুর্বৃত্তরা তাদের খাবারের সঙ্গে কিছু নেশাজাতীয় কিছু খাইয়ে ছিল কিনা এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্যই ভিসেরা সংরক্ষণ করা জরুরি। উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে র্যাব এ হত্যা মামলাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর লাশ দুটির ময়নাতদন্ত করেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের মাত্র একজন এমবিবিএস ডিগ্রিধারী জুনিয়র চিকিৎসক। এতবড় ঘটনায় লাশের ভিসেরা সংরক্ষণ করা হয়নি কেন জানতে চাইলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, সাগর-রুনীর হত্যার পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ ও নিহত হওয়ার আগে রুনী বলাৎকার হয়েছিল কিনা এ দুটি বিষয় পুলিশের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। ওদিকে হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদের ভিসেরা সংরক্ষণ করতে কেন চিকিৎসককে বলা হয়নি এমন প্রশ্নে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলানগর থানার পুলিশের এসআই আজিমুজ্জামান বলেন, যেহেতু উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছিল অর্থাৎ মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট ছিল। তাই ভিসেরা সংরক্ষণের কথা বলা হয়নি। তাছাড়া ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পরামর্শ সাপেক্ষে সবকিছু করা হয়েছিল বলে তিনি জানান। অপরদিকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত দিন পর ভিসেরা পরীক্ষায় সঠিক কিছু পাওয়া অসম্ভব। হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদের রক্ত ও মূত্র সংরক্ষণ করে রাখলে কিংবা তাদের পরনের পোশাক জব্দ করে রাখা হলে ডিএনএ টেস্টে ভালো কিছু ফলাফল পাওয়া যেত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতবড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অবশ্যই পুলিশের পক্ষ থেকে ভিসেরা সংরক্ষণ ও পরীক্ষা করানো উচিত ছিল। অন্যদিকে পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় চিকিৎসকের উচিত ছিল ভিসেরা সংরক্ষণ করে রাখা।
.
অপরদিকে নিহত সাংবাদিক মেহেরুন রুনীর ছোট ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান হতাশার সুরে বলেন, জানি না নতুন ময়নাতদন্তে ও র্যাবের তদন্তে খুনিরা চিহ্নিত হবে কিনা। খুনিদের বিচারের ব্যাপারে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যদের অনেকের মনের আশার প্রদীপ অনেকটা নিভে গেছে।
তিনি বলেন, র্যাব মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমরা র্যাবের ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই।
উল্লেখ্য, দেশের টিভি চ্যানেলের দুই জন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক নিহত হওয়ার দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কোন আসামী আজ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। এতবড় চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ বার বার নানা ধরনের নাটক সাজানোর চেষ্টা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দেশের তথা এ জাতির কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই বলছে, শেষ পর্যন্ত সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে তো?