দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কেবলমাত্র আয়রণই নয়। খেজুরে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফাইবারের জোগানও যথেষ্ট পরিমাণ। তাই বলে প্রতিদিন মুঠো মুঠো খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য কী আদতেও ভালো? আজ সেই বিষয়টিই জেনে নিন।
প্রতিদিন সকালে ভেজানো বাদামের সঙ্গে কয়েকটি খেজুর খেয়ে থাকেন। শক্তিবর্ধক হিসাবে ছোট থেকেই খেজুরের কথা শুনে আসছি আমরা। অন্তঃসত্ত্বা বা নতুন মায়েদের শরীরে আয়রণের ঘাটতি পূরণ করতে পারে এই শুকনো ফলটি। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, কেবলমাত্র আয়রণই নয়। এতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম বিদ্যমান। ফাইবারের জোগানও এতে যথেষ্ট পরিমাণ। তাই এই ফলটি ডায়েটে রাখতে পারলে শরীরের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর ঘাটতিও খুব সহজেই পূরণ হবে।
তবে উপকার পাওয়া যাবে বলে মুঠো মুঠো খেজুর খেয়ে ফেললে কিন্তু হিতে বিপরীতও হতে পারে। যেহেতু খেজুর মিষ্টিজাতীয় ফল, তাই বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। উপকার পেতে গেলে প্রতিদিন মাত্র ৩টি খেজুর খাওয়াই যথেষ্ট।
প্রতিদিন ৩টি খেজুর খেলে শরীরে কী কী উপকার পাবেন?
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ
ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই খেজুর। পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও ফাইবারের মতো উপাদানও রয়েছে এই ফলটিতে। ‘জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে যে, খেজুরে রয়েছে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে কোষের ক্ষয়ক্ষতি রুখেও দিতে পারে।
হজমে সহায়ক
এই খেজুর হজমশক্তি বাড়িয়ে তুলতেও সাহায্য করে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি খেজুর খেয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সারাদিন আপনি আর যাই খান না কেনো, খুব একটা হজমের সমস্যায় হবে না। কারণ হলো এই খেজুরের মধ্যে রয়েছে ফাইবার। ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলছে যে, খেজুরে রয়েছে প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ। তাই নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হতে পারে।
হাড় মজবুত করে
মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয় হওয়াটাও স্বাভাবিক। তাই পুষ্টিবিদরা ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই সমস্ত উপাদান রয়েছে খেজুরের মধ্যে। যা হাড়ের ক্ষয় রুখে দিয়ে তা মজবুত করতে সাহায্য করে থাকে। ‘জার্নাল অফ এথনোফার্মাকোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে যে, নিয়মিত খেজুর খেলে অস্টিয়োপোরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
হার্ট ভালো রাখতে
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, নিয়মিতভাবে খেজুর খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রা আর বাড়তে পারে না। যে কারণে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও খানিকটা হলেও এড়িয়ে চলা যাবে। ‘জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে যে, এই খেজুরের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা এলডিএল কিংবা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
মস্তিষ্কের জন্যও ভালো
খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম। স্নায়ুতন্ত্রের কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে পরিচালনা করতেই এই খনিজটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মস্তিষ্কের স্নায়ু ও স্মৃতিশক্তি দুই-ই ভালো রাখতে সাহায্য করে এই খেজুর। ‘আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে যে, খেজুরের মতো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার স্নায়ুর বয়সজনিত সমস্যাগুলোও রুখে দিতে পারে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org