দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি শরীর ক্লান্ত থাকলে ঘুম চলে আসে। কিন্তু তারপরও দেখা যায় শরীর ক্লান্ত, অথচ চোখে কোনো ঘুম নেই। এপাশ, ওপাশ করেই কাটছে রাত। সমস্যার কারণ হয়তো লুকিয়ে থাকতে পারে আপনার জীবনযাপন পদ্ধতিতে। কী কারণে অনিদ্রা হতে পারে সেটি আজ জেনে নিন।
রাতে একদৃষ্টে ঘুরন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে যতোই ঘুম আনার চেষ্টা করুন না কেনো, ঘুম ঠিক নাকের ডগা দিয়ে পিছলে পগার পার হচ্ছে বার বার। অগত্যা রাত বাড়লেই হাতে ধরা মোবাইলের নীল আলো চোখ ভেদ করে একেবারেই মাথায় গিয়ে সেঁধোয়। আর তখন ঘুমের বারোটা আরও বেজে যায়।
বর্তমান সময়ে অনেককেই বলতে শুনা যায়, বিছানায় শুয়ে ঘুম আসতে চায় না, শরীর বেজায় ক্লান্ত, তবে তাতেও ঘুম আসে না। মাথায় গুচ্ছের চিন্তা গিজগিজ করে। চিন্তামুক্ত হয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোনো মানুষের সংখ্যা দিনকে দিন কমে আসছে।
অনেক সময় এই যে ঘুম আসছি আসছি করেও আসে না, তার অনেক কারণ রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, শরীরেরও একটা ঘড়ি রয়েছে। সে’ও সব সময় কাঁটায় কাঁটায় চলতে চায়। খিদে পাওয়ার যেমন সময় রয়েছে, ঘুমেরও তেমটি সময় রয়েছে। সেই সময়ে যদি ঘুম না আসে, তাহলে সেটিও একটি রোগ। এই রোগের নাম হলো অনিদ্রা। কেনো তা হয়, জেনে নেওয়াই ভালো। কারণ হলো আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতির মধ্যে এমন অনেক ত্রুটি রয়েছে, যা এই অনিদ্রার কারণও হতে পারে।
# যারা নাইট শিফটে চাকরি করেন, তাদের ঘুমোনোর সমস্যা আরও বেশি হয়। রাতভর কাজ করে সকালে বাড়ি ফিরেই ঘুমোন তারা, তবে এই ব্যক্তিরা কিন্তু ছোট থেকে বড় হয়েছেন রাতে ঘুমিয়ে। এই ক্ষেত্রে শরীর রাতারাতি ঘুমোনোর অভ্যেস বদলে ফেলতে পারে না। যে কারণে অনিদ্রার সমস্যা হয়। এইসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়।
# অনেকেই রাত জেগে পড়াশোনা কিংবা কাজ করেন, রাত জেগে থাকার জন্য ঘনঘন সিগারেট কিংবা কফি খান। সিগারেট এবং কফি কিংবা ক্যাফিন জাতীয় জিনিস ঘুম না আসার অন্যতম বড় একটি কারণ। সুতরাং ভালো ঘুমের ইচ্ছে থাকলে, আগে এই দুই অভ্যাস ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।
# মন হলো যতো নষ্টের গোড়া। ঘুমোতে গেলেই গুচ্ছের দুশ্চিন্তা উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে। মগজে এক পাহাড় চিন্তা থাকলে কখনও ঘুম আসবে না। শরীরের মতো মন এবং মস্তিষ্কেরও বিশ্রাম দরকার। আর সেটিই যদি না হয়, তাহলে ঘুম আসবে কী করে!
# অনেক সময় শারীরিক অস্বস্তি, অসুখবিসুখও ঘুম না আসার কারণ হতে পারে। ধরুন, পিঠে কিংবা কোমরে ব্যথা কমছেই না, বা দিনভর একটানা বসে কাজ করছেন, যে কারণে মাথায় এবং ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে। তখন ব্যথার কারণে ঘুমের সমস্যাও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ গ্রহণ করে নিয়মিত স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম করতে হবে। তাহলে ব্যথাও কমবে, ঘুমও স্বাভাবিক নিয়মেই আসবে।
# যারা মনের অসুখে ভুগছেন, তাদেরও ঘুম কম হয় বা একেবারে হয় না। যেমন- অ্যালঝাইমার্স, পার্কিনসন্স রোগ থাকলে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুম না হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতি দিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটি নির্দিষ্ট অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। বই পড়তে পারেন, আবার লিখতে পারেন রোজনামচা। আপাত দৃষ্টিতে তুচ্ছ মনে হলেও এই ধরনের অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ীভাবে অনিদ্রা দূর করতেও উপকারী। দীর্ঘদিন কেও যদি অনিদ্রার জন্য কষ্ট পান, তাহলে নিজে থেকে ঘুমের ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org