দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্ষা আসতে না আসতেই পেট খারাপ, বমি লেগেই রয়েছে। বর্ষায় সংক্রামক বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর প্রকোপ বাড়ে। যে কারণে অসুখবিসুখও সেইসঙ্গে বাড়তে থাকে। তাই সাবধান থাকাটা প্রয়োজন। তাহলে কী নিয়ম মানলে সুস্থ থাকবেন?
বর্ষা শুরু হয়েছে। তবে তার সঙ্গে সময়ের নিয়ম মেনে আসে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ। তাহলে পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচবেন কীভাবে?
আপনার বাড়িতে পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তো? বৃষ্টির সময় শুরু হয়ে গেছে। এই সময় পানিবাহিত নানা অসুখবিসুখের প্রকোপ বাড়বে সেটিই স্বাভাবিক। বৃষ্টির জমা পানি, পুকুর-নালার দূষিত পানি থেকে আন্ত্রিক, ডায়রিয়ার মতো রোগও ছড়াচ্ছে সবখানে। পেট খারাপ, বমির সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। আবার ডিহাইড্রেশনও ভোগাচ্ছে অনেককে। পানি সত্যিই পরিস্রুত কি-না, তা জানার জন্য যে নিয়মিত এবং নিরন্তর তদারকি দরকার, তা সচরাচর করা হয় না। তাই ভয় থেকে যায়।
অনেক সময়ে দেখা যায় যে, বাড়ির সামনে নিকাশি নালা দিয়ে পানি বয়ে চলেছে। সেই নোংরা, ঘোলাটে পানিতে বাড়ির মেয়েরা গৃহস্থালির কাজ সারছেন। বাসনও ধুচ্ছেন। জামা-কাপড়ও কাচছেন। বাড়ির ছোট ছেলে-মেয়েরা আবার সেই পানিতে শৌচকর্ম সারছে। এই দৃশ্য অধিকাংশ গ্রামাঞ্চলের দেখা যায়। শহরাঞ্চলেও নিকাশি নালার পানিতে বাসনপত্র ধোয়ার কাজ সারেন অনেকেই। নিকাশি নালার কথা বাদ দিলে রয়েছে পুকুরের নোংরা পানির বিষয়টি। দিনের পর দিন পুকুর সংস্কার করা হয় না। এক জায়গায় আবদ্ধ পানিতে ক্রমাগত মিশে যাচ্ছে পুকুরপাড়ের বর্জ্য পদার্থ। তার থেকেও রোগ ছড়াচ্ছে অহরত। কোনও আবাসনে পানির ট্যাঙ্ক দিনের পর দিন পরিষ্কার না হলে তার থেকেও সংক্রামক অসুখ ছড়াতেই পারে।
এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা পেটের রোগ। এর কারণই হলো ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া মলের মধ্যেই থাকে। কোনও কারণে মল পানির সঙ্গে মিশে গেলে সংক্রমণ ঘটে। এছাড়াও টাইফয়েড, ক্লসটিডিয়াম, সিরেলা, সালমোনেলা থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। পানিবাহিত রোগ যে শুধু পানীয় থেকে হয়, তা কিন্তু নয়। দূষিত পানিতে গোসল করলে, মুখ-হাত ধুলে, এমনকি পুকুর, সুইমিং পুলের অপরিষ্কার পানিতে সাঁতার কাটার সময়েও কয়েক ফোঁটা মুখে ঢুকে গেলে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
কীভাবে সাবধান হবেন?
প্রথমেই আপনাকে দেখতে হবে, প্রস্রাব ঠিক মতো হচ্ছে কি-না। না হলে ওআরএস (বা খাবার স্যালাই) দিতে হবে। ওআরএস দেওয়ার পরেও বমি হতে পারে। তবে, উদ্বিগ্ন হলে চলবে না। মুখ ধুইয়ে আবারও ওআরএস দিতে হবে। শরীরে সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাইকার্বোনেট, পটাশিয়াম ক্লোরাইড ঢুকলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
এই বিষয়ে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৫ বারের বেশি পাতলা পায়খানা হলে তখন স্যালাইনের ব্যবস্থা নিতে হবে। মলের সঙ্গে রক্ত পড়লে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ‘স্টুল কালচার’ও করাতে হবে।
খাওয়াদাওয়ায় বেশি নজর দিতে হবে এই সময়ে। বেশি করে পানি খেতে হবে ও ভাজাভুজি, তেল মশলাদার খাবার খাওয়া একেবারেই খাওয়া যাবে না।
ঘর যদি মশা-মাছি মুক্ত রাখা যায় ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আর রোগ ছড়াতে পারে না। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org