দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিশু জন্মের পর অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয় মা-বাবাকে। বিশেষ করে জন্মের প্রথম ৬ মাসের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ৫ বছর অবধি ভোগায় এই রোগটি। শিশুর কী কী লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে?
অনেক শিশুর কিন্তু ঠান্ডা লাগার ধাত থাকে। তবে আপনি যদি দেখেন, সর্দিকাশি একেবারেই কমছেই না, তাহলে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে, জন্মের প্রথম ৬ মাস হতে ১ বছরের মধ্যে শিশুর যদি ঘন ঘন সর্দিজ্বর, শ্বাসের সমস্যা হতে দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি। ভাইরাস সংক্রমণে শিশুদের শ্বাসনালি-ফুসফুসে এক ধরনের সংক্রমণ হয়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘ব্রঙ্কিয়োলাইটিস’। রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-এর সংক্রমণে এই রোগটি হতে পারে।
কোন বয়সের শিশুরা বেশি ভোগে? এবং কী কী কারণে এই রোগটি হতে পারে?
# জন্মের এক মাস পর হতেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হতে দেখা যায়।
# সবচেয়ে বেশি ভোগে ৩ হতে ৬ মাসের শিশুরা।
# ৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই ভাইরাস জ্বালাতন করে।
সাধারণত শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি খুব দুর্বল হলে কিংবা জন্মের পর হার্ট কিংবা ফুসফুসের কোনও ত্রুটি থাকলে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রাণঘাতী হতে পারে।
সময়ের আগেই জন্মেছে এমন শিশু, অর্থাৎ ‘প্রিম্যাচিয়োর বেবি’দের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি আরও বেশি থাকে।
গর্ভাবস্থায় যে মায়েরা অত্যাধিক নেশা করেন কিংবা ধূমপান করেন, তাদের সন্তানদের ব্রঙ্কিয়োলাইটিস বেশি হয়ে থাকে। শিশুর সামনে যদি মা-বাবা বেশি ধূমপান করেন, তা হলেও সেই শিশুর ব্রঙ্কিয়োলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
পরিবেশের উপরেও নির্ভর করে এই রোগটি। বেশি ধুলো-ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ হলেও শিশু খুব দ্রুত সংক্রমিত হতে পারেন।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণ সর্দিকাশির মতোই। বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, যদি দেখেন শিশুর সর্দিকাশি কমছেই না। ক্রমাগত নাক দিয়ে পানি পড়ছে। হলুদ টাইপের কফ উঠছে। ত্রমশ পেটখারাপ, ডায়েরিয়ার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। কিছু খেলেই বমি হয়ে যায় শিশুর। শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ধড়ফড় করে, প্রস্রাব কমে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হাঁপানির লক্ষণও দেখা যেতে পারে শিশুর।
এমন অবস্থায় বাবা-মায়েরা কী করবেন?
ব্রঙ্কিয়োলাইটিসের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়। সব শিশুর লক্ষণ এক রকম নাও হতে পারে। যদি দেখেন যে, শিশুর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে প্রয়োজন মতো নেবুলাইজ়ারও দেওয়া যেতে পারে। হাঁপানির টান উঠলে কিংবা শিশু নাক দিয়ে শ্বাস নিতে না পারলে, সেইক্ষেত্রে অক্সিজেন দিতে হবে। তাই ব্রঙ্কিয়োলাইটিসের লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বাড়িতে অবশ্যই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। হাত পরিষ্কার করে ধুয়ে তবেই শিশুর কাছে যান। শিশুর সামনে কখনও ধূমপান করবেন না। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org