দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণ শরীর সুস্থ রাখতে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম রয়েছে, চোখের জন্যও রয়েঠে যোগের কিছু পদ্ধতি। এমন কিছু আসন রয়েছে যা নিয়মিত করতে পারলে চোখের যে কোনও জটিল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করা, সারাক্ষণ মোবাইল, ট্যাব ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে চোখের বেহাল দশা হচ্ছে অনেকের। বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে চোখের যত্ন সবার পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয় না! যেমন রাত জেগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখা বা অন্ধকার ঘরে একদম কাছ থেকে মোবাইল দেখার কারণে চোখে চিনচিনে ব্যথা হওয়া কিংবা চোখ ফুলে যাওয়া, অনবরত পাডিন পড়ার মতো সমস্যাও দেখা যায়। যে কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে চোখ। এখন কম বয়সেও ছানি পড়ছে। যে কারণে অনেকেরই দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হচ্ছে অকালে।
চোখ কীভাবে ভালো থাকবে সেই নিয়ে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য বললেন, “বর্তমানে পলক ফেলতেও ভুলে যাচ্ছেন মানুষজন। কারণ হলো একনাগাড়ে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলের দিকে তাকিয়েও থাকতে হচ্ছে। যে কারণে চোখের আর্দ্রতাও নষ্ট হচ্ছে। চোখ থেকে যে পানি বের হয়, যাকে আমরা অশ্রু বলি, এটি আসলে চোখ পরিষ্কার করে। তবে এখন মোবাইল কিংবা ল্যাপটপের নীল আলো চোখের পানিই শুকিয়ে দিচ্ছে।” অনুপ আচার্য বললেন, ভারতীয় যোগে এমন কিছু পদ্ধতি রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিও উন্নত করবে।
ফোর হেড কনট্রাকশন
প্রথমে মাথা সোজা রেখে কপাল কুঁচকে তাকান। কপালের পেশি এক বার সঙ্কোচন ও এক বার প্রসারণ করুন। বার বার করলে চোখের পেশির ব্যায়াম হবে। অনেকক্ষণ কাজ করার পর এই ব্যায়াম করলে চোখে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হবে। চোখের ক্লান্তিও কাটবে।
আই বল রোলিং
প্রথমে মাথা সোজা রেখে চোখের মণি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে হবে। এক বার ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং এক বার ঘড়ির কাঁটার ঠিক বিপরীতে। গোটা পদ্ধতিটি ৩ বার করে করতে হবে সময়ান্তরে। গোটা চোখের ব্যায়াম হয় এই পদ্ধতিতেই। এতে চোখের শুষ্ক ভাব কেটে যায়।
ভ্রামরী
পদ্মাসন, বজ্রাসন কিংবা যে কোনও সুখাসনেই বসে দুই হাতের তালু দিয়ে দুই চোখ ঢাকতে হবে। দুই হাত কাঁধ বরাবরই থাকবে। অনুপ বলেছেন, “২০ সেকেন্ড মতো এই ব্যায়াম করতে পারলে চোখের দৃষ্টি যেমনি বাড়বে, তেমনই মানসিক চাপও কমে যাবে অনেকটা। খুব ভালো যোগাসন ভ্রামরী। চোখের পাশাপাশি মন এবং মস্তিষ্কেরও ব্যায়াম হয়। মনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও তখন কেটে যায়।”
ত্রাটক
চোখ ভালো রাখতে এই ব্যায়ামটির কোনও তুলনাই হয় না। অনুপ জানিয়েছেন, ত্রাটকের পদ্ধতি অনেক রকম হয়, যারমধ্যে দু’রকম সকলেই করতে পারেন। প্রথম: বাহ্য ত্রাটক, দ্বিতীয়: অন্তঃত্রাটক।
বাহ্য ত্রাটক আবার তিন রকম হয়
জ্যোতি ত্রাটক
অন্ধকার ঘরে একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে তারপর শিখার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে হবে। পলক না ফেলে ততোক্ষণ চেয়ে থাকুন যতোক্ষণ না চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে। শুষ্ক চোখের সমস্যা দূর করতে পারে এই ব্যায়ামটি। নিয়মিত অভ্যাসে দৃষ্টিশক্তিও উন্নত হয়, মনঃসংযোগও তখন বাড়ে।
বিন্দু ত্রাটক
চোখ থেকে ৩ ফুট দূরত্বে দেওয়ালের গায়ে কোনও স্টিকার আটকে দিন বা এমন চিহ্ন আঁকুন যা আপনি দেখতে পাবেন। এখন সে দিকে পলক না ফেলেই ঠায় তাকিয়ে থাকতে হবে। যতোক্ষণ পারবেন তাকান। এরপর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ করে রেখে আবার অভ্যাস করুন।
যাত্রা ত্রাটক
পদ্মাসন কিংবা সুখাসনে বসে ডান হাতকে কাঁধ বরাবর সামনের দিকে তুলে এরপর ডান হাতের মুঠো বন্ধ করুন। তবে বুড়ো আঙুল উপরের দিকেই থাকবে। এখন নাক বরাবর হাতের মুঠো বাঁ দিক হতে ডান দিক, ডান দিক থেকে বাঁ দিকে নিয়ে যেতে হবে। এই সময় আপনার চোখ থাকবে বুড়ো আঙুলের দিকে। অর্থাৎ আঙুল বরাবর আপনার নজর ঘোরাতে হবে।
অন্তঃত্রাটক
ধ্যান করার একটি পদ্ধতি, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। অনুপ শেখাচ্ছেন যে, সুখাসনে বসে চোখ বন্ধ করে মনঃসংযোগ করতে হবে। তারপর মহিলারা কপালের ঠিক যেখানে টিপ পরেন, অর্থাৎ দুই ভ্রু’র মাঝখানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রয়েছে এমনটি কল্পনা করতে হবে। এভাবে যতোক্ষণ পারবেন থাকতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org