দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের অনেকের মধ্যেই ধারণা রয়েছে যে, পেঁয়াজ বোধহয় আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। কারণ বিশেষ করে হোমিও ডাক্তাররা প্রায় সব ওষুধের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে বারণ করেন। কিন্তু এই পেঁয়াজ আমাদের অনেক উপকার করে। আজ সে বিষয়ে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
আমরা দেখেছি বেশির ভাগ ওষুধ দিতে হোমিও ডাক্তাররা ওষুধ চলাচালিত সময় কাঁচা পেঁয়াজ খেতে না করেন। এতে আমাদের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, পেঁয়াজ নিশ্চয়ই একটি ক্ষতিকর বন্তু। কিন্তু আসলে তা নয়। পেঁয়াজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকার করে থাকে। পেঁয়াজের রয়েছে প্রভুত উপকারীতা। আজকের এই প্রতিবেদনেও সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে।
গবেষকরাও জানিয়েছেন, এই পেঁয়াজ মানব দেহের জন্য বড়ই উপকারী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই কাঁচা পেঁয়াজ খেতে বারণ করার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এই পেঁয়াজের এতই শক্তি যে ওষুধের গুণাগুণকেও অনেক সময় বাধাগ্রস্থ করে ফেলতে পারে। আর তাই হোমিও ডাক্তাররা ওষুধের সঙ্গে কাঁচা পেঁয়াজ খেতে না করেন।
পেঁয়াজ ছাড়া আমাদের রান্না চলে না। কারণ যে কোন তরকারি রান্না করতে গেলেই লাগে পেঁয়াজ। পেঁয়াজ ছাড়া কোন তরকারি রান্না করলে তার কোন স্বাদই হবে না। আবার সালাতের সাথেও আমাদের লাগে পেঁয়াজ। সালাতের সঙ্গে পেঁয়াজ না হলে সে সালাতের কোন মানেই থাকে না। খেতে হয় তাই খাই এমন ভাবেই চলছে পেঁয়াজের চাহিদা। কিন্তু আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি এই পেঁয়াজ আমাদের শরীরের কি কি উপকার করে? এই পেঁয়াজে রয়েছে বহুরকম গুণাগুণ। যা আমাদের শরীরের জন্য বড়ই উপকারী।
কি কি প্রোটিন রয়েছে পেঁয়াজে
সাধারণ মাপের একটি বড় পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ও ০.৭ শতাংশ লোহা থাকে। এছাড়া পেঁয়াজে ভিটামিন এ, বি ও সি রয়েছে।
পেঁয়াজে রয়েছে উপকারী কোয়ারসেটিনের উৎকৃষ্ট উপাদান
এই পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে কোয়ারসেটিন আছে যা পেয়াজের বাইরের হালকা বেগুনী ত্বকে থাকে। কোয়ারসেটিন রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে, হাঁপানির সমস্যা কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্রঙ্কাইটিস সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে থাকে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই উপকার পেতে সারাদিন পেঁয়াজ না খেলেও চলবে। গবেষকদের মতে দিনে মাত্র একটি মাঝারী আকারের রান্না করা কিংবা কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই এই উপকারিতা পাওয়া যাবে।
পেঁয়াজ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোষের ডিএনএ কে ক্ষতির থেকে বাঁচিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের রস টেস্ট টিউবের টিউমার সেল কে ধ্বংস করে এবং ইদুরের শরীরের টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে থাকে। পেঁয়াজের রস বিষাক্ত নয় এবং এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই যত খুশি তত খেলেও কোনো সমস্যা নেই।
পেঁয়াজ শরীরকে বিষ মুক্ত করে
প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজে প্রাকৃতিক সালফার যৌগ আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সালফারে এমিনো এসিড আছে যা রসুন ও ডিমে পাওয়া যায়। এই এমিনো এসিডগুলোকে মিথিওনাইন ও সিস্টাইন বলা হয়। এই উপাদান গুলো শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতুর থেকে মুক্তি দেয়। এমন কি এগুলো শরীর থেকে সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম বের করে দেয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। পেঁয়াজে আরও রয়েছে ভিটামিন সি যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে, বয়ষ্কদের ত্বক রক্ষায় উপকারে আসে এবং সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
পেঁয়াজ যৌন ক্ষমতা বাড়ায়
গবেষকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে। এভাবে নিয়মিত খেলে যৌন ক্ষমতা প্রায় ২০০% বেড়ে যায়। যারা পেঁয়াজের রস খেতে পছন্দ করেন না তাঁরা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও উপকার পাবেন।
পেঁয়াজ হৃৎপিণ্ডের জন্যও উপকারি
রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমায় পেঁয়াজ। তাই পেঁয়াজ হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেক কার্ডিওলোজিস্টই রোগীদেরকে নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে বলে দেন। বিশেষ করে হার্ভাডের ডাক্তার ভিক্টর গুড়েউইচ তার রোগীদেরকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে পেঁয়াজ খাওয়ার কথা বলেন।
শেষ কথা
এভাবেই প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পেঁয়াজ খান এবং সুস্থ্য সুন্দর জীবন-যাপন করুন। তবে মনে রাখবেন কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়, তাই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন। তাহলে সুস্থ্য ও রোগমুক্ত সুন্দর জীবন আপনার চলার পথকে আরও প্রশস্থ করবে। তথ্য: অনলাইন।