দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে সময়টিতে বেশি সজাগ থাকতে হয় সেটি হলো গর্ভাবস্থা। এই সময় প্রেশার বাড়লে আর রক্ষে নেই। সেইক্ষেত্রে একাধিক জটিল অসুখ পিছু নিতে পারে। এমনকী প্রাণ নিয়েও টানাটানি পড়তে পারে। তা নিয়েই বিশদে আলোচনা করলেন বিশেষজ্ঞ গাইনিকোলজিস্ট।
প্রেগন্যান্সির গোটা সময় আপনাকে শরীর নিয়ে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। বিশেষত: এই সময় প্রেশার বাড়লে সতর্ক হওয়া খুবই জরুরি। অন্যথায় শরীর এবং স্বাস্থ্যের হাল বিগড়ে যেতেও সময় লাগবে না। এমনকী বিপদেও পড়তে পারে গর্ভের সন্তান। তাই গর্ভাবস্থায় হাই প্রেশার নিয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট গাইনিকোলজিস্ট ডা: জয়তী মণ্ডল।
কী এইসব সমস্যা?
ডা: জয়তী মণ্ডলের ভাষায়, ‘গর্ভাবস্থায় ২০ সপ্তাহের পর হঠাৎ করেই মায়ের প্রেশার ৯০/১৪০ এমএমএইচজি-এর উপরে চলে গেলে অবশ্যই সাবধান হতে হবে। এটি জেস্টেশনাল হাইপারটেনশনের প্রধান একটি ইঙ্গিত। তবে অনেক সময় উপরের ও নীচের প্রেশার একসঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী নাও হতে পারে। বরং যে কোনও একটিও বাড়তে পারে। এমন সমস্যাকেও জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন বলা হয়ে থাকে। তবে সমস্যার এখানেই কিন্তু শেষ নয়। বেশির ভাগ সময় প্রেশার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাবে প্রোটিন বের হয়। এই সমস্যার নাম হলো প্রিক্ল্যাম্পশিয়া, যা মূলত একটি ভয়ঙ্কর অসুখ।’
ঝুঁকি কাদের বেশি?
# গর্ভধারণের পূর্বে বিএমআই ৩০-এর বেশি রয়েছে।
# আগে হতেই হাই বিপি রয়েছে।
# আইভিএফ হয়েছে।
# যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ় রয়েছে।
# যাদের লুপাস রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে হাই ব্লাড প্রেশারের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই থাকে বেশি। তাই এঁদের আগেভাগে সতর্ক করা হয়।
এর কী কী লক্ষণ থাকে?
ডা: জয়তী মণ্ডল জানিয়েছেন, যদি দেখা যায় হঠাৎ করে হাত-পা ফুলে যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে ২ হতে ৫ কেজি ওজন বেড়ে গেছে, পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা করছে, চোখে ঝাপসা লাগছে– এমন কিছু লক্ষণ গর্ভাবস্থায় হাই ব্লাড প্রেশারের দিকে ইঙ্গিত করে। তাই চেষ্টা করুন যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিন। তিনি যা বলবেন তা অবশ্যই মেনে চলুন। অন্যথায় পরিস্থিতি বিগড়ে যেতেও সময় লাগবে না।
হতে পারে বিরাট সমস্যা
সঠিক সময় এই রোগের চিকিৎসা না হলে একাধিক বিপদও হতে পারে। যেমন ধরুন–
# ব্রেন হেমারেজ হতে পারে।
# রেটিনাল হেমারেজও হতে পারে।
# লিভারের সমস্যাও হতে পারে।
# কিডনির ক্ষতি হওয়াও সম্ভব।
# বাচ্চার বড়সড় সমস্যাও হতে পারে।
# এমনকি মায়ের মৃত্যু পর্যন্তও হওয়া সম্ভব।
যে কারণে সময় নষ্ট না করে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
চিকিৎসা কী?
এই রোগের প্রধান চিকিৎসায় হচ্ছে হাই ব্লাড প্রেশারের ওষুধ। সেইসঙ্গে প্রয়োজন মতো ব্লাড থিনারও দেওয়া হয়ে থাকে। সেইসঙ্গে রোগীর ওজনের দিকটা মাথায় রাখতে হয়। তার যাতে, বেশি ওজন বৃদ্ধি না ঘটিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা দেখা জরুরি। সেইসঙ্গে বাইরের খাবার, অত্যাধিক লবণ সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে অনায়াসে সুস্থ থাকা যাবে বলে মনে করছেন ডা: মণ্ডল। তবে এই প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org