দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ক্যান্সারের চিকিৎসায় কী আদতেও খাবারের কোনও ভূমিকা রয়েছে? কোনও খাবার খেলে কী এই রোগটি প্রতিরোধ করা যায়? এই বিষয়টি আজ জানিয়েছে বিশিষ্ট চিকিৎসক।
শুধুমাত্র ডায়েট ও লাইফস্টাইলে বদল এনেই ক্যান্সারের হতে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। এভাবেই তার স্ত্রী কর্কট রোগকে হারিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজোৎ সিং সিধু। জানা গেছে, স্টেজ ৪ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার স্ত্রী। এমন পরিস্থিতি লেবু পানি, কাঁচা হলুদ ও তুলসী খেয়ে নাকি তার সহধর্মিনী ক্যান্সারকে হারিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন সিধু। এই ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই চারিদিকে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যেই দেশের চিকিৎসক সমাজ সিধুর এই দাবিকে উড়িয়েও দেন। এই বিষয়ে একই মত চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালের মেডিক্যাল অঙ্কোলজির প্রধান চিকিৎসক পার্থ নাথেরও। তিনি বলেছেন, ‘কিছু কিছু খাবার ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছুটা সাহায্য করে সেটি হয়তো ঠিক। তবে খাবার খেয়ে ক্যান্সার সেরে যাবে, এমন ধারণা একবারেই ভ্রান্ত। এই দাবির পিছনে কোনও বিজ্ঞানসম্মত যুক্তিই নেই।’
খাবার ও রোগ প্রতিরোধ
আমাদের আশপাশেই প্রকৃতি সাজিয়ে রেখেছে একাধিক উপকারী খাবার। তেমনই কিছু খাবারের খোঁজ দিয়েছেন পার্থবাবু। তার ভাষায়, ‘কাঁচা হলুদ, নিম পাতা ও গ্রিন টি ক্যান্সার প্রতিরোধে সামান্য হলেও সাহায্য করে। এগুলোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। এই উপাদান ক্যান্সার কোষ তৈরি হতেও বাধা দেয়। যে কারণে বিপদ এড়িয়ে যাওয়া যায়। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে গবেষণা করা হয়েছে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত কাঁচা হলুদ, নিম পাতা এবং গ্রিন টি খেতেই পারেন।’
ক্যান্সারের কারণও হতে পারে বেশ কিছু খাবার
কয়েকটি খাবার যেমন এই রোগ থেকে দূরে রাখতে সক্ষশ, ঠিক তেমনি কিছু খাবার এই জটিল অসুখকে আমন্ত্রণও জানায়। এই ক্ষেত্রে রেড মিটের নাম পূর্বেই বলতে হয়। দেখা গেছে, নিয়মিত রেড মিট খেলে কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে। এছাড়াও প্রসেসড খাবার ও প্রসেসড মাংসে মেশানো থাকে একাধিক রাসায়নিক ও লবণ। যে কারনে এই ধরনের খাবার খেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই সাবধান হতে হবে।
ওজন বেশি থাকলে মুশকিল
মনে রাখতে হবে, ওজন বেশি থাকাটা খুবই সমস্যার একটি বিষয়। এই কারণে শরীরে হামলা চালাতে পারে ক্যান্সার। তাই যে কোনও খাবার যেগুলো ওজন বাড়ায়, তার থেকে দূরত্বও বজায় রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ফাস্ট ফুড, চিপস, চকোলেট, আইসক্রিম এবং মিষ্টি খাওয়া কমাতে হবো। সেইসঙ্গে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে কোল্ড ড্রিংকস ও বাজারের প্যাকেটবন্দি ফলের রস। এইসব নিয়মগুলো মেনে চললেই পাবেন উপকার।
ক্যান্সার চিকিৎসায় জরুরি
এক সময় ক্যান্সার জয় করা খুব কঠিন কাজ ছিল। তবে কয়েক দশকে চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নতও হয়েছে। রোগ ঠিক সময় ধরা পড়লে সার্জারি, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ক্যান্সার চিকিৎসার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এই চিকিৎসা চলার সময় রোগীর বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খাবারের প্রতি অনীহা থাকেই। তাই এই সময় তাদের হালকা সহজপাচ্য খাবারগুলো খাওয়াতে হবে, যাতে করে তা খুব সহজেই হজম হয়, আবার পুষ্টির ঘাটতিও মেটে। সেই ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ- জানিয়েছেন পার্থবাবু। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org