দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে এই ভেষজগুলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। তাহলে আর ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে না।
এখন প্রশ্ন হলো আয়ুর্বেদিক ভেষজ কী? আয়ুর্বেদিক ভেষজ হলো আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রাকৃতিক উদ্ভিদ, শিকড়, মশলা ও বিভিন্ন খনিজ জাতীয় পদার্থ। এই ভেষজগুলো ভারসাম্য বজায় রেখে, শরীরকে সামগ্রিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখে। শীতের সময়, আয়ুর্বেদিক ভেষজ শরীরের উষ্ণতা বজায় রেখে পুষ্টি জোগান দেয় এবং হজমেও সাহায্য করে। এমন কি রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যাডাপ্টোজেন ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্টের মতোই শক্তিশালী বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ মৌসুমি রোগের সঙ্গে লড়াই করে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে এই ভেষজগুলো খাদ্যতালিকাতে যোগ করতে পারেন।
হলুদ
সক্রিয় যৌগ কারকিউমিনের জন্য পরিচিত হলুদে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ায়, শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে ও শীতকালে শরীরকে উষ্ণতাও প্রদান করে।
অশ্বগন্ধা
অশ্বগন্ধায় উপস্থিত অ্যাডাপ্টোজেনিক উপাদান মানসিক ও শারীরিক চাপ মুক্ত করে ও কর্টিসল হরমোনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। যে কারণে সর্দি-কাশি দূর হয় ও ঘুম ভালো হয়। ভালো ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তুলসী
শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ভেষজসম্পন্ন তুলসী শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ রুখতে ঠাণ্ডা এবং ফ্লু-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় তুলসী শরীরকে ডিটক্সিফাই করে ও প্রদাহ কমায়।
আমলকী
ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ আমলকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও ওস্তাদ। এটি শ্বাসযন্ত্রকে শক্তিশালী করে ও শরীরকে ডিটক্সিফাই করতেও সাহায্য করে।
ত্রিফলা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে ত্রিফলার মতো উপকারী ভেষজ আর হয় না। নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী হয়। প্রতি রাতে ঘুমনোর আগে গরম পানির সঙ্গে ত্রিফলা গুঁড়ো মিশিয়ে কিংবা ক্যাপসুল খেলে উপকার পাবেন।
নিম
নিম অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি রক্তকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে, লিভারকে ভালো রাখে ও ঠাণ্ডার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন ডিটক্সের জন্য নিম পাতা খান বা নিম-মিশ্রিত পানি ব্যবহার করুন।
দারুচিনি
শীতের এই সময় শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে, বিপাকক্রিয়া বাড়াতে ও মাইক্রোবিয়াল সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে দারুচিনি সিদ্ধহস্ত। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও রক্ত সঞ্চালন ভালো করতেও সাহায্য করে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org