দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গরু মোটা তাজা করণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এইসব মোটা গরুতে তাজা বিষ রয়েছে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত বলে খবর বেরিয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা যে মতামত দিয়েছেন তাতে রিতিমত পিলে চমকে যাওয়ার মতো ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গরু পুরো বিষে পরিণত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন মোটা গরু মানেই মানুষের জন্য তাজা বিষ। স্টেরয়েডের মতো ভয়ানক ক্ষতিকর উপাদান গরুর মাংসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আসন্ন কোরবানি ঈদের আগে পশুর হাটগুলোতে বিশেষ পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। গরুর শরীরে ক্ষতিকর কিছু পাওয়া গেলে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।
সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোসাদ্দেক হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা প্রতি বছরই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়ে থাকি। তাই এবার এরই মধ্যে আমরা সারা দেশে চিঠি দিয়ে আমাদের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছি, যাতে কোথাও কোরবানির কোনো পশুকে স্টেরয়েড-হরমোন বা কোনো আইটেমের বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করতে না পারে।’
কি ক্ষতি করতে পারে এই গরুর মাংস
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহামুদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ক্যান্সারসহ আরো কিছু ক্ষেত্রে মানুষের চিকিৎসার জন্য কিছু স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহার থাকলেও তা সুস্থ মানুষের জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ।
রান্নার পর এই ওষুধের গুণাগুণ কি ঠিক থাকে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ওষুধ হিসাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এর পরিমিত মান-মাত্রা সংরক্ষিত হয়ে থাকে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার লোভে গবাদিপশুর দেহে যে মান ও মাত্রার স্টেরয়েড প্রয়োগ করে থাকে তা রান্নার তাপে নষ্ট হয় না।’
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার ডা. এমরান আলী খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণত বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ কাজে স্টেরয়েড আইটেমের ডেক্সামেথাজন গ্রুপের বিভিন্ন ইনজেকশন প্রয়োগ হয়ে থাকে। এ ছাড়া ইউরিয়া খাওয়ানো হয়। মুখেও বিভিন্ন ধরনের উচ্চমাত্রার ভিটামিনের মিশ্রণ খাওয়ানো হয়। কোরবানির আগে এ প্রবণতা বেড়ে যায়। যে কারণে স্টেরয়েড আগুনের তাপেও নষ্ট হয় না।’
প্রতিবছর এভাবে গরু মোটাতাজা করে কোরবানির বাজারে বিক্রি করে লাখপতি হয়ে গেছেন অনেকেই। যে কারণে অনৈতিক কাজ হলেও অর্থের জন্য এমন কাজ করছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। আগে গরু মোটাতাজা করা হতো প্রাকৃতিক উপায়ে, উন্নত প্রজাতির ঘাস, খইলসহ পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার খাইয়ে। কিছু সাধারণ ভিটামিনও খাওয়ানো হতো, ফলে গরুর হজমশক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষুধা বেড়ে যেত। এখন অতিলোভে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করে গরু মোটা করছে।
প্রতিবার কোরবানি ঈদের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গরুর হাট পরিচালনাকারী একাধিক ব্যবসায়ীর তথ্যমতে, কোরবানির সময়ে হাটে আনার পর অনেক গরু মারা যায়। অনেক সময় ক্রেতারা গরু কিনে বাড়ি নেওয়ার পরও মৃত্যু ঘটে। এর মূল কারণ গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার কারণে গরু মোটা হয় ঠিকই কিন্তু গরুর গায়ে কোন শক্তি থাকে না। বাইরে থেকে দেখা না গেলেও ভেতরে ভেতরে অসুস্থ্য থাকে এসব গরু। তাই এবার গরু কেনার সময় সকলকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়া দরকার।