দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, চীন, কানাডা, ইইউসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা ওদের পণ্যের ওপর যে মাসুল বসিয়েছি- তার থেকেও অনেক বেশি মাসুল ওরা আমাদের পণ্যের ওপর বসিয়েছে। এটি অত্যন্ত অন্যায্য ব্যবস্থা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ভারত তো আমাদের থেকে ১০০ শতাংশেরও বেশি মাসুল বসিয়ে রেখেছে। আর চীন দ্বিগুণ মাসুল বসিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মাসুলও চারগুণ বেশি। ওরা যে হারে আমাদের পণ্যের ওপর মাসুল বসিয়ে রেখেছে আগামী ২ এপ্রিল হতে, আমরাও একই হারে বসাবো। যদি ওরা আমাদের পণ্য ওদের বাজারে ঢুকতে না দেয়, তাহলে আমরাও দেবো না। ১ এপ্রিল হতে করছি না, কারণ হলো, মনে হতে পারে, আমি এপ্রিল ফুল করছি- বোকা বানাচ্ছি। তাই ২ এপ্রিল হতে সমহারে মাসুল চালু হবে।
এতে ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?
রেটিং এজেন্সি মুডিজের রিপোর্ট অনুসারে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে।
রিপোর্ট বলছে যে, ভারতের খাবার, বস্ত্র ও ওষুধ শিল্প বিপদে পড়তে পারে। যেসব ভারতীয় সংস্থা মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরশীল তারাও বিপাকে পড়বে। তাদের মতে, এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার উপরেও চাপ বাড়বে, মার্কিন ডলারই শক্তিশালী হবে। আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে রিজার্ভ ব্যাংকের হাতে খুব বেশি বিকল্পও থাকবে না।
ভারত কোথায় চাপে পড়তে পারে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশ পণ্যের ওপর ভারত ৫ শতাংশ হারে মাসুল বসিয়েছে। যে কারণে সেইসব জিনিসে সমহারে মাসুল বসানোর নীতিতে ভারতের কোনো অসুবিধাও হবে না। তবে পোশাক, বস্ত্রশিল্প, চটি-জুতোর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ১৫ হতে ৩৫ শতাংশ মাসুল বসায়, তাহলেই ভারতের অসুবিধা হবে।
গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রতিটি জিনিস পৃথক করে বেছে নিয়ে সমহারে মাসুল বসায়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ভারতের কোনোই অসুবিধা হবে না। ভারতের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি অ্যাভাকার্ডোর উপর উঁচু হারে মাসুল বসায়, তাহলে তাতে দিল্লির কিছু এসে যাবে না। কারণ হলো, ভারত ঠিক সেভাবে অ্যাভাকার্ডো আমদানি করে না। তারা যদি ক্ষেত্র অনুসারে মাসুল বসায় ও সব কৃষিজ জিনিসের উপর উচ্চ হারে মাসুল বসায়, তাহলে ভারতের ক্ষতিই হবে। তখন ভারতকে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের ওপর মাসুল কমাতে হবে, কিংবা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অর্থনীতি বিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। যে কারণে সমহারে শুল্ক বসানোর নীতির কারণে ভারতের রপ্তানি বেশ ধাক্কা খাবে।
জয়ন্ত বলেছেন যে, জানুয়ারিতে বিদেশি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলো শেয়ার বাজার হতে ৭৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। আর ফেব্রুয়ারিতে তোলা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো। যে কারণে শেয়ার বাজার রীতিমতো চাপে রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রভাব কিন্তু সেখানেও পড়তে পারে।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন।
ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি অতুল কাশ্যপ বলেছেন যে, আমরা আশা করি যে, এই আলোচনাটি সফল হবে। এই বাণিজ্য চুক্তি অনেকদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। যে কারণে বিশ্বের দুটি বড় অর্থনীতির দেশ কাছাকাছিও আসতে পারবে।
তিনি জানিয়েছেন যে, মার্কিন বাণিজ্যের মাত্র আড়াই শতাংশ ভারতের সঙ্গেই হয়। এর পরিমাণ বৃদ্ধি দরকার। একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে হবে। দুই দেশ দুই জনের বাজারে যাতে অবাধেই ঢুকতে পারে, সেই ব্যবস্থাও থাকা দরকার।
অর্থনীতি বিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত আরও জানিয়েছেন, নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের উপর চাপ বেশিই থাকবে। অ্যামেরিকা তাদের শর্ত আরও বেশি করে চাপাতে চাইবে। ভারতকে তখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক দাবি মেনে নিতেও হতে পারে। তথ্যসূত্র: ডয়চে ভেলে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org