দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রায় তিন বছর পর আবার শুরু হচ্ছে নিউজিল্যাণ্ড বনাম বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রতিযোগীতা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চট্টগ্রাম এক পয়মন্তের নাম। আজ সেই চট্টগ্রামেই শুরু হচ্ছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট। সর্বশেষ ২০১০ সালে বাংলাদেশের কাছে ৪-০ তে ওয়ানডে সিরিজ হেরে যাবার দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করবে নিউজিল্যাণ্ডকে। বাংলাদেশ চাইবে আরাধ্য সেই সুখস্মৃতি আবারও ফিরিয়ে আনতে।
গত ছয়মাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঘটে গেছে আশরাফুলের ক্রিকেট ম্যাচ ফিক্সিং, বিপিএলে খেলোয়াড়দের ম্যাচ পাতানো সহ বেশ কিছু ঘটনাবহুল ঘটনা। তবে সবকিছু ভুলে এখন সম্পুর্ণ মনোযোগ ক্রিকেটেই ধরে রাখতে চান বলে জানিয়েছে দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তিনি বলেন, “এখন দেশের পক্ষে খেলতে নামার সময় এসেছে। কাজেই অতীতের সবকিছুই এখন গৌণ। পুরো দলই এই সিরিজ দিয়ে খেলায় ফিরতে চাচ্ছে, দেশের এই সংকটময় সময়ে আমরা দেশবাসীকে আবারও হাসি উপহার দিতে চাই।”
খেলতে নামার আগে ২০১০ সালের স্মৃতি উঁকি দেয়া প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, “সেই সিরিজের কথা ভেবে আমরা নিয়মিতই অনুপ্রাণিত হই। তবে আমরা এই টেস্ট খেলতে নামছি দীর্ঘদিন পর। মাঝে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে বা অন্যান্য জায়গায় টুকটাক খেললেও টেস্ট আসলে পুরোপুরি ভিন্ন জিনিস। এই সিরিজে আসলে নিউজিল্যাণ্ড ছাড়াও আমাদের খেলতে হবে নিজেদের বিরুদ্ধেই। তবে আশার কথা গত এক/দেড় বছর ধরে আমরা আমাদের দেশের মাটিতে খুবই ধারাবাহিক। কাজেই এই চাপ আমাদের ওপর প্রভাব ফেলবে না।”
নতুন উইকেট, নতুন মাঠে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতেও সমস্যা হবেনা বলে মনে করেন মুশফিক। তিনি বলেন, “অনেক দিন পর টেস্ট খেলছি, উইকেটও একদম নতুন। তবে আমাদের সমস্যা কিছু হলে আমাদের চেয়ে ওদের হবে তিন গুণ বেশি। আমরা দ্রুতই নিজেদের মানিয়ে নেবো এই মাঠে।”
“মাঠে আমরা সবসময় জেতার লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামি। এবারও প্রতিটি ম্যাচ জয়ের জন্য খেলব। জিততে যা যা করা প্রয়োজন, সব করার চেষ্টা করব। শুধু টেস্ট নয়; টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি সব ম্যাচেই জয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেছি। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের সাফল্যের পর আমরা র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে গেলেও এই সিরিজে লক্ষ্য থাকবে সিরিজটা জিতে আমরাও র্যাংকিংয়ে উন্নতি করব। তবে সবার আগে আমরা আমাদের ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখবো।”
বর্তমান বাংলাদেশে সাকিব আল হাসানের অবস্থান একসময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বসেরা অলরাউন্ডার গ্যারী সোবার্সের মতো। সাকিব দলে থাকা মানে সেই দলের অধিনায়কের মুখে নিশ্চিন্তের একটা হাসি। সর্বশেষ ২০১০ সালের সেই বাংলাওয়াশের নায়কও ছিলেন এই সাকিব। শুধু তাই নয় ২০০৮ সালে ৩৬ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যাণ্ডের দলের কাছে ত্রাস হয়ে ধরা দেন সাকিব। তার দিকে এবারও তাকিয়ে থাকবে পুরো বাংলাদেশ। তবে চার সপ্তাহ পরে ইঞ্জুরি থেকে ফিরে সাকিব আল হাসানের শারীরিক অবস্থার কথা বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিবের রেকর্ড এবারও সাকিবের হয়ে কথা বললে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে একথা বলাই যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যাণ্ড এবার খুবই সতর্ক একটি দল, বলেছেন রস টেইলর। বলবেনই বা না কেন! ২০১০ সালে যে রস টেইলর একাই লড়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেবার বেশ কয়েকটি লড়াকু ইনিংস খেলেও সঙ্গীর অভাবে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি। বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যাণ্ডের পরিকল্পনার কথা উঠলে টেইলর বলেন, “সাকিব এবং তামিমকে যত দ্রুত সম্ভব ফিরিয়ে দেয়াটাই আমাদের লক্ষ্য। বোলিংয়ে আব্দুর রাজ্জাককে মোকাবেলা বেশ কঠিন হবে। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যেই এই সফরে আসার আগে নয়দিন শ্রীলঙ্কায় থেকে এই পিচে কীভাবে খেলতে হবে সে ব্যাপারে ধারণা নিয়ে এসেছি। আশা করছি আমরা আমাদের পরিকল্পনামতোই এগোতে পারবো।”
অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছেন, “২০১০ সালের স্মৃতি মুছে ফেলাটাই এবারের সিরিজের লক্ষ্য আমাদের। সেই সিরিজ আমাদের শিখিয়েছে অনেক কিছুই, আমাদের অনেকের ক্যারিয়ারকে হুমকির ফেলে দেয়া সেই সিরিজ সহজে ভোলার নয়। কিন্তু এবার আমরা প্রস্তুত। ২০১০ সালের সিরিজের প্রতিটা ভুল থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ অনেক বড় প্রতিপক্ষ, আমাদের প্রস্তুতিও আমরা মাঠে অনূদিত করেই দেখাবো! তবে বাংলাদেশ দলের নতুন মুখ বনাম নিউজিল্যাণ্ড দলের নতুন মুখের লড়াই হবে আলাদা করে, কারা বেশী সেরা এই প্রতিযোগীতাটাই মাঠে দেখা যাবে!”
তবে খেলা শুরু আগে সবাই দিনের শুরুতে আকাশের দিকেই তাকাবেন, কারণ বৃষ্টি যে কদিন ধরে বাগড়া দিচ্ছে খুব! বৃষ্টি না হলেই বাংলাদেশ কয়েকদিনের জন্য ডুবে যাবে ক্রিকেট জল্পনা কল্পনার সাগরে। নিউজিল্যাণ্ডকে আবারও বাংলাওয়াশ করার বাসনায় ক্রিকেটীয় সুপ্রভাত বাংলাদেশ!