দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণের সমস্যা অনেকটাই বেড়েছে কোভিড পরবর্তী সময়ের পর থেকে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কিডনিতে বাসা বাঁধছে ছত্রাক। একবার কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে ও যথাসময়ে তা চিহ্নিত করা না গেলে শরীরের বড় ধরণের ক্ষতিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণের চিকিৎসা সঠিক সময় না হলে তা থেকে রক্ত দূষিত হওয়ার মতো সমস্যা, কিডনি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এমনকি, কিডনির কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়েও যেতে পারে।
ওই রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি?
ডায়াবেটিসের রোগী ও যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম, মূলত তাদেরই ওই রোগের ঝুঁকি সবথেকে বেশি। এ ছাড়াও ক্যান্সারের রোগী, এইডসের রোগীদেরও কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছেন ইউরোলজিস্ট বিজয় কুমার শর্মা মাদুরি। তার ভাষায়, ‘‘সুস্থ মানুষের শরীরে এমন হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।’’
কিডনির ছত্রাক কখন ছড়ায়?
বিজয় কুমার শর্মা মাদুরি জানিয়েছেন, কিডনির ওই ছত্রাক সেই সমস্ত জায়গাতে নিশ্চিন্তে বাড়ে, যে শরীরে রোগব্যাধিকে ঠেকানোর শক্তিও কম। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘মুশকিলের বিষয় হলো, কোভিড পরবর্তী সময় বহু মানুষ, যারা আগে ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন, তাদের অনেকটাই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ডায়াবেটিসের রোগীরাই কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক বেশি।’’ এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে মিশে থাকা উচ্চমাত্রার শর্করা ও তাদের ঝিমিয়ে থাকা রোগপ্রতিরোধ শক্তিই ওই ছত্রাককে বাড়তে আরও সাহায্য করে।
উপসর্গগুলো কী কী?
কিডনিতে ছত্রাকের সংক্রমণ কতোটা ছড়িয়েছে, তার উপরে নির্ভর করে এর উপসর্গ। তবে যেগুলো সাধারণত দেখা যায়, তা হলো—
# প্রস্রাব করার সময় জ্বালা জ্বালা ভাব।
# বার বার প্রস্রাবের বেগ আসা।
# কাঁখে ব্যথা।
# বমি হওয়া।
# জ্বর।
বিজয় কুমার শর্মা মাদুরি জানিয়েছেন, ‘‘অনেকের ক্ষেত্রেই কাঁখের অংশের ত্বকের রং বদলে যেতে পারে। এমনকি, ত্বকের ওই অংশের নরম ভাব চলে গিয়ে শক্তও হয়ে যেতে পারে। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ নামে এক ধরনের ছত্রাক থেকেই এমন হতে পারে।’’
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ বেশি ছড়ালে রক্তচাপ অত্যন্ত কমেও যেতে পারে, যা থেকে রোগীর প্রাণ সংশয়ও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
তাহলে কী করা উচিত?
সতর্ক থাকলে ও আগে বুঝে চিকিৎসা করালে ছত্রাকের সংক্রমণের সম্পূর্ণ নিরাময় করাও সম্ভব অ্যান্টি ফাঙ্গাল অ্যান্টি বায়োটিকসের সাহায্যে। যথাসময়ে চিকিৎসা করালে এই রোগটি শরীরে কোনও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে না। তাই সতর্ক থাকাটা জরুরি। বিশেষ করে ডায়াবেটিসের রোগীদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিজয় কুমার শর্মা মাদুরি। কোনও সমস্যা হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন তিনি। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org