দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গরমের এই সময় ঘেমেনেয়ে ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দেওয়া কিংবা খাওয়াদাওয়ার অনিয়মের কারণে, হানা দিতে পারে নানা অসুখ। এই রোগবালাইগুলোর মধ্যে আবার অন্যতম হলো ডায়ারিয়া।
শীত, বসন্ত পেরিয়ে এলো গ্রীষ্মের পালা। আবহাওয়া দপ্তরের আগাম সতর্কতা হলো, এই বছর গরমের তীব্রতা নাকি বাড়বে। গরমের আবহাওয়া মানেই নানা অসুখের বাড়বাড়ন্ত। গরমের এই সময় ঘেমেনেয়ে ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দেওয়া কিংবা খাওয়াদাওয়ার অনিয়মের কারণে, হানা দিতে পারে নানা অসুখ। এই রোগবালাইগুলোর মধ্যে আবার অন্যতম হলো ডায়ারিয়া।
চার্লস ডারউইনের ‘সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’ তত্ত্ব মেনে সব জীবাণুরাই বর্তমানে বলতে গেলে বছরভর সক্রিয়। যে কারণে ডায়ারিয়া হতে পারে বছরের যে কোনও সময়ই। তবে গরমকালে বাড়তি সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। এই রোগ যদি একবার বাসা বাঁধে, তাহলে সহজেই সুস্থ হওয়া মুশকিল। শারীরিক অবস্থার বাড়াবাড়ি হলে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই ডায়ারিয়া নিয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছেন চিকিৎসকরা।
বড়রা তো বটেই, গরমে ডায়ারিয়ার মতো রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে শিশুরা। কারণ হলো বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। তবে বড়দের ক্ষেত্রেও সময়কালে চিকিৎসা শুরু না হলে, এই অসুখ মারাত্মক আকারও ধারণ করতে পারে। চিকিৎসক সৌভিক চক্রবর্তী বলেছেন, ‘এই সময় তেল-মশলাদার খাবার খেলে পেটের গোলমাল শুরু হয়। তার উপর হজমশক্তি কমে যায়। এছাড়াও গরমে তেষ্টা মেটাতে অনেকেই রাস্তার ধারের নানা পানীয়তে চুমুক দেন। তা থেকেও শরীরে এই রোগ ঢুকতেই পারে।’ ডায়ারিয়া মূলত পানিবাহিত রোগ। মূলত পানিবাহিত ব্যাক্টেরিয়া থেকে ডায়ারিয়া ছড়ায়। শরীর হতে পানি বেরিয়ে যায় বলে, এই অসুখ মানুষকে দুর্বল করে তোলে। সে কারণে প্রয়োজনে স্যালাইনও দিতে হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই রোগ থেকে দূরে থাকতে কতোগুলো নিয়ম মানতে হবে। তাহলে সেগুলো কী?
# চিকিৎসকের মতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে ডায়ারিয়া এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুতে হবে। স্যানিটাইজারও ব্যবহার করতে হবে।
# গরম গরম খাবার খেতে হবে। খাবার বেশিক্ষণ ফেলে রাখলে মোটেও চলবে না। গরম অবস্থাতেই খাবার খেতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে খাবার গরম করে খেতে হবে। কারণ হলো ঠাণ্ডা খাবারেই নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে।
# ডায়ারিয়ার প্রকোপ হতে বাঁচতে এই সময় বাইরের খাবার খাওয়ায় রাশও টানতে হবে। রাস্তার ধারের দোকানের ঝালমুড়ি হতে শুরু করে চপ, সিঙাড়া খাওয়া পরিহার করতে হবে।
# গরমের এই সময় ফল খাওয়াটা জরুরি। তবে রাস্তার কাটা ফল খাওয়া যাবে না। অনেকক্ষণ আগে কেটে রাখা ফল খেলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। শরবত, ঘোল, লেবুর পানির মতো পানীয় রাস্তা থেকে কিনে না খাওয়াই ভালো।
# পানি ফুটিয়ে খেতে পারলে খুবই ভালো। ডায়ারিয়া মূলত পানি বাহিত রোগ। যে কারণে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হলে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org