দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেক ধরনের কফিনের কথা শোনা গেলেও এবার শোনা গেছে এক জীবন্ত কফিনের কথা। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ বারবাডোজের কাহিনী।
অনেক দেশেই প্রচলন রয়েছে কোন মানুষ মারা যাওয়ার পর কফিনে ভরে কবর দিয়ে আসা হয়। তারপর কি আর কেও খবর নিয়ে দেখেছে যে কফিনের সেই মানুষটি মাটির তলায় নড়াচড়া করে? এমন কথা একটা খবর শুনলে যে কেও আজগুবি মনে করতে পারেন। তবে এই কাহিনীর এই ঘটনা সত্যি সত্যিই ঘটেছে!
এটি হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ বারবাডোজ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে রয়েছে অদ্ভুত এক ভয়াবহ স্থান। এখানে রয়েছে এমন এক শবাগার যেখানকার কফিনগুলো নিজ থেকেই নড়াচড়া করে জায়গা বদল করত। কোনো শক্তিতে কফিনগুলো এমন নড়েচড়ে- তা নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করে যাচ্ছেন গবেষকরা।
এই কফিন নড়ার ঘটনা ঘটে চেজ ভল্ট নামের এক বিশেষ কবরস্থানে। ব্রিজটাউন থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিশাল এই ভল্ট বা কফিন রাখার জায়গা নির্মাণ করা হয়েছিল চেজ পরিবার ও তাদের বন্ধুদের জন্য। ১৮০৭ সালের জুলাই মাসে থমাসিনা গডডার্ড মারা গেলে তার দেহ একটি সাধারণ কাঠের কফিনে ঢুকিয়ে এই ভল্টে রেখে দেয়া হয়। এর কয়েক বছর পরেই মাত্র ২ বছর বয়স্ক মেরি অ্যান চেজকে এই ভল্টে সমাহিত করা হয় আরেকটি কফিনে। ১৮১২ সালের ৬ জুলাই মেরির বড় বোন ডকরাস চেজ মারা যায়, তাকেও ভল্টে ঢোকানো হয়। কেও কেও বলেন, বাবার সাথে ঝগড়া করে হতাশায় ডকরাস খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেন আর এতেই তার মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরেই মেরি আর ডকরাসের বাবা থমাস চেজও মারা যান।
আসল ঘটনা ধরা পড়লো তখন যখন থমাসকে সমাহিত করার জন্য সেই বিশেষ ভল্ট খোলা হল, শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আগত সবার মাথায় যেন বাজ পড়লো। এর আগে যে কফিনগুলো ভল্টের ভেতরে যেখানে রাখা হয়েছিল, সেগুলোর আর কোনোটিই সেখানে নেই। সবার ধারণা এটা নিশ্চয়ই কোনো ডাকাতদলের কাজ। ভল্টে মূল্যবান কিছু আছে ভেবে লুট করার উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল আর খোঁজাখুঁজির সময় কফিনগুলো নাড়াচাড়া করেছিল বলে এমন হয়েছে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভল্টের ছিল একটিমাত্র ঢোকার পথ। এ পথে বিশাল এক পাথরের স্ল্যাব বসানো হয়েছিল। এটি এতটাই ভারি ছিল যে প্রতিবার এটি সরানোর জন্য প্রচুর লোকজনের দরকার। সেই সময় এটাও ধারণা করা হয়েছিল যে, কোনোভাবে হয়তো কবর খননকারীদের কারণে কফিনগুলো নড়ে গিয়েছিল। যাই হোক, এরপর সরে যাওয়া কফিনগুলোকে আবার জায়গামতো রেখে দেয়া হল। আর নতুন যুক্ত হল থমাসের কফিন। এরপর ভল্টের মুখ আবার আগের মতো বন্ধ করে দেয়া হল আগের মতোই।
এর পরের ঘটনা ১৮১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ভল্ট এবার খোলা হল ১১ বছর বয়স্ক চার্লস ব্রিউস্টার এমিসকে সমাহিত করার জন্য। তখনও ঘটলো একই কাণ্ড। প্রতিটি কফিনকে যেন জায়গা থেকে তুলে দূরে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি থমাসকে বহনকারী কফিনের ওজন ছিল ২৪০ পাউন্ড, সেটাকেও তার অবস্থান থেকে পাওয়া গেল অনেক দূরে! হতভম্ব অবস্থায় সবাই কফিনগুলোকে রেখে দিল আবার আগের জায়গায়।
এর পরের ঘটনাটি মাত্র ৫২ দিন পরের। এবার স্যামুয়েল ব্রিউস্টারকে সমাহিত করার জন্য ভল্ট খোলা হল। এবার সেই জায়গাটি লোকে লোকারণ্য। সবার সামনে পাথরের স্ল্যাব খুলে ভল্টের একমাত্র প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত করা হল। যথারীতি কফিনগুলো আবারো তাদের নিজেদের জায়গায় নয়, অন্য জায়গায় পাওয়া গেল। এছাড়া ভল্টের প্রথম সদস্যা মিসেস থমাসিনা গডডার্ডের কাঠের কফিনটি পাওয়া গেল ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায়। এটাকে তার দিয়ে বেঁধে রাখা হল। বেশ কয়েকজন তদন্তকারী যাদের মাঝে রেভারেন্ড থমাস ওডারসনও ছিলেন, ভল্টের ভেতর ও কফিনগুলো পরীক্ষা করে দেখলেন। অস্বাভাবিক কিছু না পাওয়াতে ভল্ট পরিষ্কার করে আবার বন্ধ করে দেয়া হলো যথারিতি।
এবারের ঘটনা ১৮১৯ সালের ১৭ জুলাই। আরো একবার ভল্ট খোলা হল এবং সেই আগের কাহিনীর মতো যথারীতি কফিনগুলোকে এলোমেলো অবস্থায় পাওয়া গেল। শুধু মিসেস থমাসিনার ভগ্নপ্রায় কফিনটি নিজের জায়গাতে ছিল। দ্বীপের গভর্নর লর্ড কম্বারমেয়ারের নির্দেশে তদন্তকারীরা তদন্ত করলেন। কফিনগুলোকে আবার নিজেদের জায়গায় আনা হল আর কে কফিনগুলো নাড়াচ্ছে তার পায়ের ছাপ নেয়ার জন্য ভল্টের মেঝেতে বালি ছড়িয়ে দেয়া হলো।
এর পরের বছর ১৮২০ সালের ১৮ এপ্রিলের ঘটনা। এবার সরকারি নির্দেশে ভল্ট খোলা হল। এবার দেখা গেল, কফিনগুলো জায়গা থেকে শুধু নড়েই যায়নি, বেশ কয়েকটি কফিন পুরো উল্টে গিয়েছে! আর মেঝেতে যে বালি ফেলা হয়েছিল, কারো পায়ের ছাপ নেই তাতে!
এমন ঘটনায় হতভম্ব সবাই। সরকারি নির্দেশে কফিনগুলো দ্রুত সরিয়ে অন্যত্র সমাধিস্থ করা হল। এরপর ২শ’ বছর ধরে এই ভল্ট খালি পড়ে আছে। তবে এটিকে অনেকেই গুজব বলেই মনে করেন। কিন্তু ইতিহাস ঘেঁটে তখনকার বারবাডোজে চেজ পরিবারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সেই ভয়াবহ আজব ভল্ট এখনও দাঁড়িয়ে আছে যেখানে ছিল ঠিক সেখানেই।
বহু পর্যটক এখনও এখানে আসেন সেই ইতিহাসখ্যাত কাহিনীর সেই সমাধিস্থল দেখতে। তবে যাদের বেশি সাহস রয়েছে তারাই কেবল সেখানে যেতে পারেন। ভিতুদের জন্য সেখানে না যাওয়ায় ভালো। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।