দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বা শরীরের মেদ আধুনিক জীবনের অন্যতম স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, স্থূলতা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, লিভারের অসুখসহ বহু জটিল রোগের মূল কারণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, সুস্থ থাকতে পুরুষের শরীরে গড়ে ১০-২০% এবং মহিলার ক্ষেত্রে ২০-৩০% ফ্যাট থাকা প্রয়োজন। এর বেশি হলে ওজন নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়ে।
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
গবেষণায় দেখা যায়, মোট ক্যালোরি গ্রহণ এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য না থাকাই ফ্যাট জমার প্রধান কারণ। উচ্চ চর্বিযুক্ত, ভাজাপোড়া, ফাস্টফুড, মিষ্টি জাতীয় খাবার শরীরে দ্রুত ক্যালোরি জমায়। পরিবর্তে আঁশযুক্ত শাকসবজি, ফল, পূর্ণশস্য এবং লিন প্রোটিন যেমন মাছ, ডাল, ডিমের সাদা অংশ গ্রহণ করলে শরীর দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকে ও অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি কম প্রবেশ করে। এক গবেষণায় (Harvard School of Public Health, ২০২১) প্রমাণিত হয়, প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক খাবার খেলে ফ্যাট জমার ঝুঁকি ৩০% কমে যায়।
নিয়মিত ব্যায়াম
শুধু ডায়েট নয়, শারীরিক কর্মকাণ্ডও ফ্যাট কমানোর জন্য অপরিহার্য। আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন (ACSM) সুপারিশ করেছে, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার কার্ডিও (যেমন দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার) ফ্যাট পোড়াতে কার্যকর। এছাড়া ওয়েট ট্রেনিং বা শক্তিবর্ধক ব্যায়াম শরীরের মাংসপেশি বৃদ্ধি করে, যার ফলে মেটাবলিজম বেড়ে যায় এবং বিশ্রামের সময়ও ক্যালোরি পোড়ে।
ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
ঘুমের অভাব হরমোনাল ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটায়। বিশেষত ঘ্রেলিন ও লেপ্টিন হরমোন ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিন ৫ ঘণ্টার কম ঘুমায় তাদের স্থূল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% বেশি। আবার মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোন বৃদ্ধি করে, যা পেটের ফ্যাট জমতে সাহায্য করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম (৭-৮ ঘণ্টা) ও মেডিটেশন, যোগব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
পানীয় ও তরল গ্রহণ
শরীরে জমা ফ্যাট কমাতে পর্যাপ্ত পানি খাওয়া কার্যকর। দিনে ২-৩ লিটার পানি খেলে মেটাবলিজম বাড়ে এবং টক্সিন বের হয়ে যায়। অপরদিকে সফট ড্রিঙ্কস, চিনিযুক্ত জুস ও অ্যালকোহল অতিরিক্ত ক্যালোরির উৎস, যা কমানো জরুরি।
দীর্ঘমেয়াদি জীবনধারা
ফ্যাট কমানো কোনো স্বল্পমেয়াদি প্রক্রিয়া নয়। অনেক সময় দ্রুত ডায়েট বা ওষুধের মাধ্যমে ওজন কমানো হলেও তা টেকসই হয় না এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত ও নিয়মিত অভ্যাসে পরিবর্তনই স্থায়ী সমাধান।
গবেষণালব্ধ তথ্য বলছে, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ – এই চারটি মূল কৌশল ফ্যাট কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। স্থায়ী জীবনধারার পরিবর্তনই শরীরকে সুস্থ, ফিট ও দীর্ঘমেয়াদে রোগমুক্ত রাখতে পারে।
চাইলে আমি এটার সাথে খাদ্য পরিকল্পনা (ডায়েট চার্ট) বা ব্যায়ামের সাপ্তাহিক রুটিনও যুক্ত করে দিতে পারি। আপনি কি চান আমি সেটাও করে দিই?
একটি সহজ গবেষণাভিত্তিক ডায়েট চার্ট ও ব্যায়াম রুটিন। এটি সাধারণ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য। (যদি ডায়াবেটিস, কিডনি বা অন্য কোনো জটিল রোগ থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার/ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে।)
ফ্যাট কমানোর জন্য দৈনিক খাদ্য চার্ট দেখে নিন (সকাল ৭–৮ টা)
# গরম পানি বা লেবু-গরম পানি – ১ গ্লাস
# ওটস/ডালিয়া/চিড়া – ১ বাটি
# ডিমের সাদা অংশ – ২টি (সেদ্ধ বা অমলেট, তেল ছাড়া)
# ১টি ফল (আপেল/পেঁপে/কমলা)
# মধ্যসকাল (১০–১১ টা)
# গ্রিন টি / লেবু চা (চিনি ছাড়া)
# শসা/গাজর/টমেটো স্লাইস – ১ কাপ
দুপুর (১–২ টা)
# ভাত (বাদামি চাল/অল্প সাদা চাল) – ১ কাপ
# ডাল – ½ কাপ
# মাছ বা মুরগি (গ্রিল/সেদ্ধ) – ১ টুকরা
# সবজি – ১ কাপ
# সালাদ – শসা, পেঁয়াজ, টমেটো
বিকেল (৪–৫ টা)
# বাদাম/কাঠবাদাম – ৪–৫টি
# গ্রিন টি বা ব্ল্যাক কফি (চিনি ছাড়া)
# ১টি ফল (জাম্বুরা/কলা ছোট/পেঁপে)
# রাত (৮–৯ টা)
# রুটি (আটা) – ১/২টি বা অল্প ভাত
# সবজি – ১ কাপ
# ডাল বা মুরগি/মাছ – অল্প
# সালাদ – ১ কাপ
# ঘুমের আগে (১০–১১ টা)
# হালকা গরম দুধ (চিনি ছাড়া) / লেবু পানি
ব্যায়াম রুটিন (সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন)
# কার্ডিও (ফ্যাট পোড়ানোর জন্য)
# দ্রুত হাঁটা বা জগিং – ৩০ মিনিট
# বিকল্প: সাইক্লিং / সাঁতার / দড়ি লাফ – ২০ মিনিট
# শক্তিবর্ধক ব্যায়াম (পেশি ও মেটাবলিজম বাড়াতে)
# স্কোয়াট – ৩ সেট × ১২ বার
# পুশ-আপ – ৩ সেট × ১০ বার
# প্ল্যাঙ্ক – ৩ সেট × ৩০ সেকেন্ড
# লাঞ্জ – ৩ সেট × ১০ বার
টিপস:
# প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন
# দিনে ২.৫–৩ লিটার পানি খাবেন
অবশ্যই ফাস্টফুড, সফট ড্রিঙ্কস এবং অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এড়িয়ে চলতে হবে।
>>>>>>>>>>>>>>>>>>
করনা সম্পর্কে নতুন করে জরুরী সতর্কতা
আসুন আমরা আবার মাস্ক পরা শুরু করি। কারণ করোনা তথা COVID-Omicron XBB আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ভিন্ন ও বিপজ্জনক। এটি সহজে শনাক্তও হয় না, তাই সবার মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি।
১. COVID-Omicron XBB এর নতুন উপসর্গগুলো:
i) কাশি নেই।
ii) জ্বর নেই।
বেশিরভাগ উপসর্গ হলো—
iii) অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
iv) মাথাব্যথা।
v) গলাব্যথা।
vi) পিঠে ব্যথা।
vii) নিউমোনিয়া।
viii) ক্ষুধা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া।
২. এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টার চেয়ে ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত এবং মৃত্যুহারও বেশি।
৩. উপসর্গগুলো খুব অল্প সময়েই মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং কখনও কখনও কোনো স্পষ্ট উপসর্গ না দেখিয়েই অবস্থা খারাপ হতে শুরু করে।
৪. তাই আরও বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
এই ভ্যারিয়েন্টটি নাসোফ্যারেঞ্জিয়াল (নাকের গভীর অংশ) অঞ্চলে পাওয়া যায় না, বরং সরাসরি ফুসফুসের “উইন্ডো” অংশে আঘাত করে এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।
৫. কিছু রোগীর মধ্যে জ্বর বা ব্যথা না থাকলেও এক্স-রে করলে মৃদু নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নাক দিয়ে নেয়া স্যাম্পলে (সোয়াব) পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসছে, যা পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট (ফলস নেগেটিভ) এর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। এ কারণে এই ভাইরাসকে ‘ধূর্ত’ বলা হচ্ছে।
এর মানে হলো— এটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, সরাসরি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়, ভাইরাল নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। এই কারণে COVID-Omicron XBB এত বেশি ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।
৬. যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন, খোলা জায়গাতেও অন্তত ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন, সঠিকভাবে মাস্ক পরুন, এবং নিয়মিত হাত ধুয়ে ফেলুন—even যদি কাশি বা হাঁচি না থাকে।
এই COVID-Omicron XBB “ওয়েভ” প্রথম COVID-19 মহামারির চেয়েও ভয়াবহ।
সতর্কতা, সচেতনতা ও বৈচিত্র্যময় সুরক্ষা ব্যবস্থাই আমাদের রক্ষা করতে পারে।
✅ দয়া করে এই বার্তাটি বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
✅ শুধুমাত্র নিজের কাছে রেখে দেবেন না।
✅ যত বেশি সম্ভব লোককে জানিয়ে দিন।
ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org