দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফ্যাটি লিভার বা লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে “হেপাটিক স্টিয়াটোসিস” বলা হয়।

সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অলস জীবনযাপন, স্থূলতা, অতিরিক্ত মদ্যপান এবং ডায়াবেটিসের কারণে ফ্যাটি লিভার দেখা দেয়। সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনলে এটি সিরোসিস, লিভার ক্যানসার বা লিভার ফেইলিওরের মতো গুরুতর জটিলতায় রূপ নিতে পারে। তবে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এ রোগ থেকে সহজেই বাঁচা সম্ভব।
# স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে তৈলাক্ত, ভাজা, জাঙ্ক ফুড ও অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এর পরিবর্তে আঁশসমৃদ্ধ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, সম্পূর্ণ শস্য এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ (যেমন ইলিশ, সার্ডিন, টুনা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। চিনি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ কমিয়ে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বাড়ানো উচিত।
# নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং, দৌড়ানো বা সাঁতার কাটার মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বিশেষ করে পেটের চর্বি কমানো লিভারের ওপর চাপ কমায়।
# অ্যালকোহল সেবন সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা উচিত। মদ্যপানের কারণে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে এবং কোষ ধ্বংস হয়। ফলে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
# পর্যাপ্ত পানি পান করা লিভারকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। পানি শরীরের বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয় এবং লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। একই সঙ্গে সফট ড্রিংকস, কোলা বা মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলা দরকার।
# পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনিদ্রা ও দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ লিভারের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। তাই নিয়মিত ঘুম এবং মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
# ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এসব সমস্যা থাকলে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
ফ্যাটি লিভার আধুনিক যুগের এক “সাইলেন্ট কিলার” রোগ। তবে অল্প সচেতনতা ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, অ্যালকোহল পরিহার, পর্যাপ্ত পানি ও ঘুম—এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে লিভার সুস্থ থাকবে এবং ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে। সুস্থ লিভার মানেই সুস্থ জীবন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org