দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দাঁত আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কেবলমাত্র খাবার চিবানোর কাজেই নয়, মুখের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যের প্রতিফলনও বহন করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দাঁতের যথাযথ যত্ন না নিলে দাঁতের ক্ষয়, গিঙ্গিভাইটিস, ক্যাভিটি, মুখের দুর্গন্ধ ও অন্যান্য জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক দাঁতের যত্ন শুধু মৌখিক স্বাস্থ্যই নয়, বরং সামগ্রিক শারীরিক সুস্থতাকেও প্রভাবিত করে।
দাঁতের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো নিয়মিত ব্রাশ করা। দিনে কমপক্ষে দুইবার, বিশেষ করে সকাল এবং রাতে ঘুমানোর আগে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয় এবং দাঁতের এনামেল শক্ত থাকে। ব্রাশের সময় নরম ব্রিস্টল ব্যবহার করলে মাড়ি বা দাঁতের ক্ষতি কম হয়। ব্রাশ করার পর কমপক্ষে দুই মিনিট সময় দেওয়া জরুরি।
দাঁতের যত্নে খাদ্যাভ্যাসের প্রভাবও অপরিসীম। অতিরিক্ত চিনি ও ক্যান্ডি খাবার দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়। তাই চিনি যুক্ত খাবার খাওয়ার পর দাঁত ধোয়া উচিত। এছাড়াও, পর্যাপ্ত ফলমূল এবং সবজি খেলে দাঁতের স্বাভাবিক পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে। দুধ, দই, পনিরের মতো খাবার ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে, যা দাঁতকে মজবুত রাখে।
দাঁতের সঠিক যত্নে নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞরা প্রতি ছয় মাসে একবার দাঁত দেখানোর পরামর্শ দেন। ডেন্টাল ক্লিনিং বা স্কেলিং নিয়মিত করলে পেঁয়াজি বা দাঁতের পাথর তৈরি কম হয়। একই সঙ্গে, যদি দাঁতে ব্যথা, লালচে মাড়ি বা সংক্রমণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, দাঁতকে সুস্থ রাখতে শুধু ব্রাশই যথেষ্ট নয়, ফ্লস বা দাঁতের সুতো ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লস দিয়ে দাঁতের মধ্যে আটকে থাকা খাদ্যকণিকা ও ব্যাকটেরিয়া সরানো যায়। এছাড়া, মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে প্রচুর পানি পান করা জরুরি। পানি মুখের pH ভারসাম্য বজায় রাখে এবং জীবাণু কমায়।
দাঁতের যত্নে ধূমপান এবং অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে চলাও অত্যন্ত জরুরি। এগুলো দাঁতের রঙ নষ্ট করে এবং দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়। মুখে শর্করা বা অ্যাসিড জাতীয় খাবার কম ব্যবহার করলেও দাঁতের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।
দাঁতের যত্ন মানেই কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং স্বাস্থ্যের অন্যতম ভিত্তি। নিয়মিত ব্রাশ, ফ্লস ব্যবহার, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পানি ও ডেন্টাল চেকআপ মিলিয়ে দাঁত দীর্ঘ সময় সুস্থ এবং মজবুত রাখা সম্ভব। সময়মতো যত্ন নিলে দাঁতের সমস্যা প্রতিরোধ করা যায় ও সুস্থ মুখের সৌন্দর্যও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org