দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়ার পরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের জন্য এই মুক্তি মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।

কারণ হলো, তাদের পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, তাদের প্রিয়জনদের তৃতীয় কোনো দেশে জোরপূর্বকভাবে নির্বাসনে পাঠানো হবে।
গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) ফিলিস্তিনি বন্দিদের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে যে, বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্তত ১৫৪ জন ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েল নির্বাসনে পাঠাবে। গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের বিনিময়ে ইসরায়েল মোট ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দি এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। অপরদিকে, যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ২০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।
কোন দেশে এই মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের পাঠানো হবে, তা অবশ্য এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে এ বছরের জানুয়ারিতে আগের এক বন্দিমুক্তি চুক্তিতে ইসরায়েল ডজনখানেক বন্দিকে তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া এবং তুরস্কসহ অঞ্চলের কয়েকটি দেশে নির্বাসনে পাঠায়। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এই জোরপূর্বক নির্বাসন আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ ও এতে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের নাগরিকত্বের অধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে। তারা এটিকে বন্দিবিনিময়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত মানদণ্ডের উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছেন।
দোহা ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের জননীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তামের কারমাউত আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘এটি যে অবৈধ, সেটি বলার অপেক্ষায় রাখে না। কারণ হলো, এরা ফিলিস্তিনের নাগরিক। তাদের ছোট এক কারাগার হতে মুক্তি দেওয়া হলেও এখন তাদের বড় এক কারাগারে পাঠানো হচ্ছে- নিজেদের সমাজ থেকে দূরে, এমন এক দেশে যেখানে তাদের ওপর নানা বিধিনিষেধও থাকবে। এটি মূলত অমানবিক।’
অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় ফিলিস্তিনি বন্দি মুহাম্মদ ইমরানের পরিবারের সদস্যরা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন যে, মুহাম্মদকে নির্বাসনে পাঠানোর খবর শুনে তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন। তার ভাই রায়েদ ইমরান জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আগেই ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, ৪৩ বছর বয়সী মুহাম্মদকে মুক্তি দেওয়া হবে। তবে পরিবারটি সোমবার জানতে পারে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রেফতার হওয়া ও ১৩টি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মুহাম্মদকে দেশে ফেরোত পাঠানো হচ্ছে না, বরং তাকে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে।
আল–জাজিরার প্রতিবেদক নিদা ইব্রাহিম বলেছেন, “অনেক পরিবারই হয়তো এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে, যেখানে তাদের প্রিয়জনদের ফিলিস্তিনের বাইরে নির্বাসনে পাঠানো হবে, তবে নিজেরা সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করার কোনো সুযোগই থাকবে না,’ কারণ হলো সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে। জাতিসংঘের হিসেব মতে, গাজা থেকে যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই “জোরপূর্বক গুমের শিকার’ হন। তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org