দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হলো হৃদযন্ত্রের অন্যতম মারাত্মক সমস্যা, যা হঠাৎই জীবনহানি ঘটাতে পারে। এটি ঘটে তখন যখন হৃদযন্ত্রের একটি অংশ পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পায় না।

সাধারণত রক্তনালির মধ্যে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। বর্তমান ব্যস্ত ও অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তবে এর সম্ভাব্য কারণগুলো জানলে সতর্ক থাকা সম্ভব।
রক্তনালির সঞ্চালন সমস্যাই সবচেয়ে বড় কারণ। ধমনীর ভিতর কোলেস্টেরল, চর্বি ও প্লাক জমে রক্ত চলাচল কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটি এথেরোসক্লেরোসিস নামে পরিচিত। অতিরিক্ত কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার, তেল-মশলাযুক্ত খাদ্য এবং অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যা বাড়াতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। রক্তচাপ দীর্ঘ সময় বেশি থাকলে হৃদযন্ত্রের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধমনীর ক্ষতি হয়, যা হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
ডায়াবেটিস বা শর্করার অসাম্য হৃদযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। রক্তে উচ্চ গ্লুকোজের মাত্রা ধমনীর ক্ষতি করে এবং হৃদপেশিতে অক্সিজেন পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত ওজন ও স্থূলতা হার্টের জন্য হুমকিস্বরূপ। অতিরিক্ত শরীরের চর্বি ধমনীর চাপ বাড়ায় এবং রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা যেমন ধূমপান, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাবও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়। ধূমপান রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যা হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দীর্ঘমেয়াদে হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। দীর্ঘসময় মানসিক চাপ থাকলে রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, যা হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
এছাড়াও, বয়স ও পারিবারিক ইতিহাসও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে প্রভাব ফেলে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং যদি পরিবারের কেউ আগে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে ঝুঁকি আরও বেশি থাকে।
হার্ট অ্যাটাক একটি ভয়ঙ্কর কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য রোগ। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান-অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সতর্ক থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। সতর্কতা ও সচেতনতা গ্রহণ করাই হৃদযন্ত্রকে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখার মূল চাবিকাঠি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org