দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দাঁত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুস্থ এবং শক্তিশালী দাঁত শুধু সুন্দর হাসি দেয় না, বরং খাদ্য চিবানো, হজম প্রক্রিয়া এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য।

তবে অযত্নের কারণে দাঁতে ব্যথা, ক্ষয়, গহ্বর বা মাড়ি সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নিয়মিত ও সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি।
দাঁত মাজা একটি অপরিহার্য অভ্যাস। দিনে অন্তত দুইবার, সকালে এবং রাতের খাবারের পরে দাঁত মাজা উচিত। নরম ব্রাশ ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁত এবং মাড়ি উভয়ই সুস্থ থাকে। ব্রাশ করার সময় দাঁতের সামনের, পেছনের এবং চিবানোর পৃষ্ঠ সব জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার করা দরকার। সাধারণত প্রতি দুই-তিন মাস পর ব্রাশ পরিবর্তন করাই ভালো।
ফ্লস ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাশ দিয়ে সবসময় দাঁতের মাঝে থাকা খাবারের কণিকাগুলো পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ফ্লস ব্যবহারে এই কণিকাগুলো বের করা যায়, যা দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ি সংক্রমণ কমাতে সহায়ক। নিয়মিত ফ্লস ব্যবহার করলে মুখে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে এবং দুর্গন্ধও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। অতিরিক্ত চিনি, মিষ্টি ও জাঙ্কফুড দাঁতের ক্ষয় বাড়ায়। চিপস, ক্যান্ডি বা সফট ড্রিংক বেশি খাওয়ার পরিবর্তে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া ভালো। খাবারের পরে গরম বা ঠান্ডা পানি পান করা দাঁতের জন্য উপকারী। এছাড়া কার্বনেটেড বা খুব ঠান্ডা পানীয়ের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত।
ডেন্টাল চেকআপ নিয়মিত করা প্রয়োজন। বছরে অন্তত দুইবার দাঁতের ডাক্তারকে দেখানো উচিৎ। ডেন্টিস্ট দাঁতের গহ্বর, মাড়ির সমস্যা বা অন্যান্য রোগ আগেভাগেই শনাক্ত করতে পারেন। প্রয়োজনে স্কেলিং বা ফ্লোরাইড ট্রীটমেন্ট করালে দাঁতের স্বাস্থ্য দীর্ঘ সময় বজায় থাকে।
খুব তীক্ষ্ণ বা কঠিন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। বরফ, শক্ত বাদাম বা ক্যান্ডি চিবানো দাঁতের ক্ষয় বাড়াতে পারে। একইভাবে দাঁতের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়।
সুস্থ জীবনধারার সঙ্গে দাঁতের যত্ন অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান, ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত পরিষ্কার রাখা দাঁতের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে।
সুস্থ দাঁত শুধু খাদ্য গ্রহণ সহজ করে না, আত্মবিশ্বাস ও সুন্দর হাসিও দেয়। তাই প্রতিদিনের অভ্যাস এবং নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপে বিনিয়োগ করা মানে দীর্ঘ সময় সুস্থ দাঁতের নিশ্চয়তা পাওয়া।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org