দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০২৫ সাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও শক্তির বিকল্প উৎস- সব ক্ষেত্রেই এই বছরে এসেছে যুগান্তকারী অগ্রগতি।

বিজ্ঞানীরা এমন সব আবিষ্কার ও উদ্ভাবন উপহার দিয়েছেন, যা মানবজীবনকে আরও নিরাপদ, সহজ ও টেকসই করার পথে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
২০২৫ সালে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দ্রুত বিকাশ। এ বছর এআই শুধু তথ্য বিশ্লেষণ বা স্বয়ংক্রিয় কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংবাদিকতা এবং গবেষণাক্ষেত্রে মানুষের সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উন্নত ভাষা মডেল এবং স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং দুর্যোগ পূর্বাভাসে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অনেক দেশেই এআই-ভিত্তিক সিস্টেম ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করা হয়েছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ২০২৫ সাল ছিল আশাব্যঞ্জক। ক্যানসার ও জেনেটিক রোগের চিকিৎসায় নতুন থেরাপি উদ্ভাবিত হয়েছে, যেখানে জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসা বা “পারসোনালাইজড মেডিসিন” এ বছর আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে কৃত্রিম অঙ্গ, থ্রি-ডি প্রিন্টেড টিস্যু এবং রোবটিক সার্জারির ব্যবহার বাড়ায় জটিল অস্ত্রোপচার আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ হয়েছে।
মহাকাশ গবেষণায় ২০২৫ সাল ছিল ঐতিহাসিক। চাঁদে স্থায়ী মানবঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তুতি আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়। পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহে পাঠানো উন্নত রোবট ও গবেষণা যান সেখানে পানির অস্তিত্ব ও সম্ভাব্য প্রাণের উপাদান নিয়ে নতুন তথ্য পাঠিয়েছে। বেসরকারি মহাকাশ সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ মহাকাশ ভ্রমণকে তুলনামূলকভাবে সহজ ও সাশ্রয়ী করেছে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিবেশ ও শক্তি বিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ২০২৫ সালে। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে সৌর ও বায়ু শক্তির দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উন্নত ব্যাটারি প্রযুক্তি ও শক্তি সংরক্ষণ ব্যবস্থার ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পথে অগ্রগতি হয়েছে। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বিজ্ঞানীরা নতুন কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা শিল্পখাতে পরিবেশবান্ধব পরিবর্তন আনতে সহায়ক।
জলবিজ্ঞান এবং খাদ্য গবেষণায়ও এসেছে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। খরা এবং বন্যা মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্যাটেলাইট তথ্য ব্যবহার করে উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা চালু হয়েছে। পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে উৎপাদিত বিকল্প খাদ্য এবং উন্নত বীজ প্রযুক্তি ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তবে ২০২৫ সালের বিজ্ঞান জগৎ শুধু সাফল্যের গল্পই নয়; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নৈতিকতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার, তথ্য নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাই প্রযুক্তির পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীল ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছেন।
২০২৫ সাল প্রমাণ করেছে যে, বিজ্ঞান মানবসভ্যতার অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি। সঠিক পরিকল্পনা, নৈতিকতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য ও মানবকল্যাণমুখী করে তুলবে- এমন প্রত্যাশাই এখন বিশ্ববাসীর সবার।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org