দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাধারণত কোনো বিপদজনক রানওয়েতে উড়োজাহাজের পাইলট সেখানে ল্যাণ্ড করেন না, কিন্তু বিশ্বের এমনও কিছু এয়ারপোর্ট রয়েছে যেখানকার রানয়েতে ল্যাণ্ড করতে গেলে আপনাকে কিছুটা হলেও রোমাঞ্চ এবং থ্রিল ছুঁয়ে যাবে। Airfarewatchdog নামের একটি টীমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমনই ১০টি এয়ারপোর্ট রানওয়ের নাম! সেসব এয়ারপোর্টের রানওয়ে নিয়েই ছবিসহ এই প্রতিবেদন।
Sea Ice Runway, Antarctica
এটি এন্টার্ক্টিকায় অবস্থিত বরফে ঢাকা একটি রানওয়ে, যা উড়োজাহাজের অতিরিক্ত ওজনের কারণে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে! উপরন্তু চারিদিকে মাত্রাতিরিক্ত বরফের কারণে এই রানওয়ে সবসময় বরফমুক্ত রাখা সম্ভব হয় না। কয়েকবছর আগেই এই রানওয়ের বরফ গলতে শুরু করেছিলো, তখন এখানকার সব শিডিউল বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলো কতৃপক্ষ।
পাইলটদের এই রানওয়ে সবসময় এড়িয়ে চলতেই পরামর্শ দেয়া হয়, বরফের মধ্যে ১০ ইঞ্চির বেশী চাকা না ডুবিয়ে রানওয়েতে অবতরণ করা যেকোনো পাইলটের জন্যই চ্যালেঞ্জ!
Gibraltar Airport (or North Front Airport), Gibraltar
জিব্রাল্টারের এই এয়ারপোর্টে ঢুকলে আপনার মনে হবে আপনি বোধহয় কোনো রেইলরোড ক্রসিংয়ের ভেতর পড়েছেন! অনেকটা গাড়ি চলাচলের রাস্তার মাঝে এই এয়ারপোর্টের রানওয়ে বানানো হয়েছে, যার ফলস্বরুপ কোনো উড়োজাহাজ এখানে ল্যাণ্ড করার সময় দুইপাশের রাস্তা ব্লক করে দেয়া হয় যেমনভাবে রেইলগাড়ি আসার সময় ব্লক করে দেয়া হয়, ফলে তখন দুইপাশে জ্যাম হয়ে যায়! ব্যাপারটা যথেষ্টই রোমাঞ্চকর!
Madeira Airport, Portugal
এই রানওয়েটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি আকারে খুবই ছোটো, এবং পাহাড় – সমুদ্রের মাঝে এটি অবস্থিত। পাইলটকে অনেকটা সমুদ্র এবং পাহাড় শাসন করে এখানে ল্যাণ্ড করতে হয়! কারণ এখানে বাতাস সবসময় অনুকূল অবস্থায় থাকে না এবং পাইলটকে পাহাড় এড়িয়ে খুবই দক্ষতার সাথে অবতরণ করতে হয়। সত্যিকারের থ্রিলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এই রানওয়ের জুড়ি নেই।
Qamdo Bamda Airport, Tibet
তিব্বতের এই রানওয়েটি সমুদ্র থেকে ১৪০০ ফিট ওপরে এবং দীর্ঘ ৩.৫ মাইল লম্বা! সমুদ্র থেকে এতো উপরে ভ্রমণ সবসময়ই বেশ বিপদজনক এবং এই উচ্চতায় একটি উড়োজাহাজকে নিরাপদে অবতরণ করানো একজন পাইলটের জন্য বেশ কঠিন!
Juancho E. Yrausquin Airport, Saba Island
এই এয়াপোর্টের রানওয়েটি সম্ভবত কোনো পাইলোটকেই স্বাগত জানায় না! কারণ এটির রানওয়ে এমনভাবে বানানো যে পাইলট যদি একটু এদিক সেদিক ভুল করে তাহলে পুরো উড়োজাহাজটি রানওয়ের শেষপ্রান্তে সমুদ্রের তলে ডুবে যাবে!
পর্বতময় ভূ-খণ্ড এই রানওয়েটিকে করে তুলেছে চ্যালেঞ্জিং! তুখোড় অভিজ্ঞ পাইলট ছাড়া এখানে উড়োজাহাজ ল্যাণ্ড করার সাহস কেউ করে না, যদিও এখন পর্যন্ত এখানে কোনো দূর্ঘটনার কথা জানা যায়নি।
Kai Tak Airport, Hong Kong
হংকং এর এই এয়ারপোর্টটি এতোই ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো যে ১৯৯৮ সালে এটির কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়! কারণ অবতরণের সময় রানওয়েতে উড়োজাহাজটিকে বিপদজনকভাবে বাঁক নিতে হতো!
Matekane Air Strip, Lesotho
যদি বুঝে থাকেন তবে উপরের ছবি দেখেই সম্ভবত ভয় পেয়ে গেছেন আপনি! হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন এই রানওয়েতে উড়োজাহাজ যখন শূণ্যে উঠে যায় তখন নীচে আর কোনো সমতল ভূমি থাকে না, ফলে উড়োজাহাজে যদি হঠাৎ কোনো সমস্যা দেখা দেয় তবে সমূহ বিপদ! সাহসী পাইলট ছাড়া একাজ অসম্ভব।
Eagle County Regional Airport, Vail, CO
এই এয়ারপোর্টটি নিয়ে SmarterTravel এর এডিটর Caroline Costello বলেছেন, বৈরি আবহাওয়া, চারিদিকের পাহাড় এই রানওয়েটিকে বিপদজনক করে তুলেছে! উড়োজাহাজটি আকাশে উঠে কোনোরুপ সমস্যার সম্মুখীন হলে এটি সরাসরি পাহাড়ের উপর ধ্বসে পড়বে!
Narsarsuaq Airport, Greenland
গ্রীণল্যাণ্ডের এই এয়ারপোর্টটি পাইলটদের জন্য আরেক দুঃসাহসীকতার নাম! কারণ এই রানওয়েতে ল্যাণ্ড করতে হলে উড়োজাহাজটিকে পুরো ৯০ ডিগ্রী বাঁক খাওয়াতে হয়! আর একটি উড়োজাহাজকে ৯০ ডিগ্রী বাঁক খাওয়ানো সোজা কথা নয়!
Ketchikan International Airport, Ketchikan, AK
এই এয়ারপোর্টের রানওয়ে সম্পর্কে একটি কথা বেশ প্রসিদ্ধ, সেটি হলো, “এর থেকে সাবধান!” পাহাড় এবং সাগরের মাঝে এই রানওয়েটি অস্বাভাবিক ছোটো! এবং আছে ভারী বৃষ্টির সাথে প্রবল তুষাড়পাত! এসব এড়িয়ে এই রানওয়েতে একটি উড়োজাহাজ ল্যাণ্ড করানো আসলেই চাট্টিখানি কথা নয়!
তথ্যসূত্রঃ BusinessInsider