ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের মাত্র কদিন অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও বইসহ নানা বিষয়ে দেশের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন যে সংবাদটি আরও ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো বই সংকট। সংবাদ পাওয়া গেছে, নকল বইয়ে বাজার নাকি ভরে গেছে।
প্রকাশ, চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৪ হাজার ৭৫৬ জন ছাত্রছাত্রী। মনে করা হচ্ছে, এরা সবাই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এর বাইরে মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করা ২ লাখ ৪১ হাজার ৫৭২ জন এবং কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা আরও ৭৩ হাজার ৫৬৬ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি কলেজে ভর্তি হতে পারে। সে হিসাবে প্রায় ১১ লাখ শিক্ষার্থী এবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে। কিন্তু এসব শিক্ষার্থীর জন্য সরকার বাংলা বই ছাপিয়ে রেখেছে মাত্র পৌনে ২ লাখ, আর ইংরেজি দেড় লাখ। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে বাকি শিক্ষার্থীরা কি পড়বে?
অনুসন্ধানী একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পৌনে ২ লাখ বাংলা এবং দেড় লাখ ইংরেজি বইও তিন বছর আগে ছাপানো। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি সেগুলো বিক্রির নাম করে ছাপিয়ে নকল বই বিক্রির পথ সুগম করে রেখেছে। তিন বছর ধরে দেশের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা নকল বই পড়ছে। এনসিটিবিই ওই নকল বই ছাপানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, সংস্থাটির শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে বাংলাবাজারকেন্দ্রিক বই নকলকারী সিন্ডিকেটের যোগসাজশ রয়েছে। আর সবকিছু জেনেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছে।
জানা গেছে, এনসিটিবি শিক্ষার্থীদের জন্য যে বাংলা বই বিক্রি করে থাকে, তার প্রতিটার দাম ৪৫ টাকা। আর নকল বইয়ের দাম ৫৬ টাকা। অর্থাৎ কেবল এই একটি বইয়ের পেছনেই সরকার প্রায় ৫ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। বিপরীত দিকে জনগণকে গচ্চা দিতে হচ্ছে আরও ১ কোটি টাকা। এর ফলে কেবল বাংলা বই থেকেই নকলবাজরা ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এসব বইয়ের মানও নিম্ন। উচ্চ মাধ্যমিকে বর্তমানে যেসব বিষয়ে পাঠদান করা হয়, তার মধ্যে বাংলা, ইংরেজি এবং ইংরেজি গ্রামার সরকারি প্রতিষ্ঠান এনসিটিবির ছাপার কথা। কিন্তু এনসিটিবি বাজারে বই না ছাড়ার কারণে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নকল ও নিম্নমানের বই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই তিনটি বই থেকে জালকারীরা বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু নির্বিকার এনসিটিবি।
এদিকে এনসিটিবির উদাসীনতার কারণে শুধু সরকারি বই নকলই হয়নি, একশ্রেণীর গাইড প্রকাশকও গাইডে সরকারি বই জুড়ে দিয়ে বাজারজাত করেছে। এদের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এনসিটিবি তাদের বিরুদ্ধে কোন অ্যাকশন নেয়নি।
ওদিকে বাংলাবাজার, নীলক্ষেতসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের সামনের বইয়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দোকানে নকল বইয়ের ছড়াছড়ি। বাংলাবাজারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বছর প্রায় ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হবে- এমন টার্গেট সামনে রেখে নকল পাঠ্যবই ছাপানো হয়েছে। নিম্নমানের ওইসব বইয়ে প্রকৃত বোর্ডের বইয়ের গল্প-কবিতার কোন ধারাবাহিকতা নেই। রয়েছে মুদ্রণ প্রমাদের ছড়াছড়ি। বইয়ের নান্দনিক সৌন্দর্যও নেই। কেবল নকল বাংলা বই নয়, এর গাইডও বাজারে ছেড়েছে বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা।
কলেজ শিক্ষকদের অভিযোগ, এনসিটিবির খামখেয়ালির কারণে নকল বই কিনে প্রতারিত হয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। আসলে ৮ বছর ধরে এটা চলে আসছে। আর ৩ বছরে এটা মহামারী আকার ধারণ করেছে ।
এনসিটিবির বক্তব্য
নকল বই বাজারে ছাড়ার ক্ষেত্রে এনসিটিবির সম্পৃক্ততা জানতে চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ মোস্তফা কামালউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের বই কেউ কেনে না। তাই বই ছেপে তারা কিই বা করবেন। বই না ছাপার যুক্তি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সরকারের যে কয়টি টাকা খরচ করে বই ছাপব, তার সবই জলে যাবে। কারণ বাজার তো নকল বইয়ে ভর্তি। আসল বই চিনবে কে? সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গত তিন বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র পাল জানান, পৌনে ২ লাখ বাংলা আর দেড় লাখ ইংরেজি বই ছাপা হলেও তাদের সব শিক্ষার্থীর জন্য বই ছাপার চিন্তাভাবনা রয়েছে। প্রকাশিত বই বিক্রি হলেই তা করা হবে। এমন প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা চান শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে ভালোটা করতে।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চিন্তিত। তারা সঠিক সময় ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে বইও পাবে কিনা। নইলে নকল বইয়ের ওপর নির্ভর করতে হবে!