দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ মাত্র ৮ বছরের ছোট শিশু শান্ত আমাদের বীভৎস সমাজের শিকার, নিজের নেশাগ্রস্থ সৎ বাবা তার দুই হাত সম্পূর্ণ কেটে দেয়া শান্ত এখন কিছু মহৎ মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমেরিকাতে নিজের হাত ভালো করার ও ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখছে।
ঘটনাটি ঘটেছিল ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার তেজগাঁও এলাকার বস্তিতে। শান্ত তার সৎ নেশাগ্রস্থ বাবার কাছে চিপস কিনে দেয়ার আবদার করেছিল সৎ বাবা চিপস কিনে না দিলে শান্ত বলেছিল তুমি আমাকে কিছুই কিনে দাওনা একটুও আদর করনা, এতে শান্তের সেই সৎ বাবা (জাহাঙ্গীর) রেগে যায় এবং শান্তকে বলে আয় তোকে জন্মের মত চিপস খাওয়াই, জাহাঙ্গীর শান্তকে নিয়ে পাশের ঝোপে যায় এবং বটি দিয়ে কোপ দিয়ে শান্তের ডান হাত কেটে ফেলে এসময় শান্ত ঘটনায় অবাক হয়ে যায় এবং সে কান্না করতে করতে জাহাঙ্গীরকে বলে বাবা তুমি আমার ডান হাত কেটে দিলে আমি খাব কি করে? তখন জাহাঙ্গীর শান্তের মুখ চেপে ধরে ওর অন্য হাতটিও কেটে দেয় পরে শান্ত সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গেলে জাহাঙ্গীর শান্তকে রেখে পালিয়ে যায়।
ইতোমধ্যে শান্তের মা গৃহকর্মী নাসিমা বেগম ছেলের দেখা না পেয়ে ছেলেকে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে এবং মাইকিং সহ জিডি করে। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘন্টারও পরে শান্তকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঐ ঝোপে খুঁজে পায় পুলিশ সে সময় শান্তের বাম হাত তখনও শরীরের সাথে ঝুলছিল। সেখান থেকে শান্তকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার প্রাথমিক চিকিৎসা চলে। পরে শান্তের জ্ঞান ফিরে এলে সে সমস্ত ঘটনার বর্বণা দেয়।
পুলিশ অবশ্য ধারণা করছে শান্তের দুই হাত তার নেশা গ্রস্ত পিতা কেটে দেয়ার পেছনে কেবল চিপস খেতে চেয়েছে সেই জন্য নয়, এর পেছনে মূল কারণ শান্তকে দিয়ে ভিক্ষা করানো। কারণ ঢাকার বিভিন্ন যায়গায় শান্তের মত এমন অসংখ্য শিশুর অঙ্গহানি ঘটছে কেবল ভিক্ষাবৃতিতে শিশুদের ঠেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে।
যেভাবে শান্তের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হলঃ
সে সময় শান্ত অনেকটা চিকিৎসার অভাবেই ছিল। তবে মিডিয়ায় ঘটনা প্রকাশের পর শান্তের বিষয়ে অনেকেরই আগ্রহ জন্মায়। ঘটনা বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুকসানা কামার এর নজরে এলে তিনি শান্তকে দেখতে ছুটে যান হাসপাতালে। এবং শান্তের জন্য সকল প্রাথমিক সু-চিকিৎসা’র ব্যবস্থা গ্রহনে সচেষ্ট হন। পরে শান্তকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং শান্ত ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে।
তবে বাংলাদেশের স্থানীয় ডাক্তার’রা জানায় শান্তকে প্ল্যাস্টিক সার্জারি সহ উন্নত চিকিৎসা দিতে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। ফলে শুরু হয় রুকসানার শান্তের জন্য নতুন যুদ্ধ, রুকসানা কামার শান্তের উন্নত চিকিৎসার জন্য UDION নামের এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান রেদয়ান চৌধুরীর কাছে ছুটে যান। UDION দরিদ্র শিশুদের উন্নত জীবন দেয়া নিয়ে কাজ করে। ফলে রেদয়ান চৌধুরী দেশের বাইরের নানান হাসপাতালে এবং অবস্থা সম্পূর্ণ মানুশের সাথে শান্তের বিষয়ে কথা বলেন এবং দীর্ঘ ৬ মাস নানান চেষ্টার পর অবশেষে শান্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন আমেরিকার Shriners Hospitals for Children নামের হাসপাতালে। Shriners Hospitals শান্তের দুই হাতে কৃত্রিম হাত লাগানোর প্ল্যাস্টিক সার্জারি করার জন্য সম্মত হয়।
শুরু হয় শান্তের নতুন স্বপ্ন দেখা, ইতোমধ্যে রুকসানা কামার বেশ কিছু মহৎ মানুষের আর্থিক সাহায্যে শান্তকে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার সকল ব্যবস্থা করে ফেললেন। শান্ত বর্তমানে আমেরিকাতেই অবস্থান করছে এবং হাসপাতালে ভর্তি আছে অপেক্ষায় আছে তার প্রথম অপারেশনের।
শান্তের জন্য একটি তহবিল খোলা হয়েছে সেখানে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ডলার বাংলাদেশি টাকায় ৮ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়েছে তবে তার ভবিষ্যৎ এবং সুস্থ হয়ে উঠার জন্য আরো সাহায্যের প্রয়োজন। সকল সাহায্য দাতার নাম সহ সাহায্যের পরিমাণ লিখা থাকে শান্তের জন্য খোলা ওয়েব সাইটে। আপনি চাইলে হ্যাল্প শান্ত নামের ওয়েব সাইটে গিয়ে শান্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
চলুন জেনে নিই শান্তের জন্য কি পরিমাণ অর্থ প্রয়োজনঃ
শান্ত এবং রুকসানা কামারের আমেরিকা যাওয়া আসার টিকেটের মূল্যঃ ৩,২০০ ডলার।
শান্তের সেখানে থাকা খাওয়া সহ মোট চিকিৎসা কালীন ৮ মাসে আনুমানিক খরচঃ ১৬,০০০ ডলার।
মোট খরচ লাগবেঃ ১৯,২০০ ডলার।
বর্তমানে সংগৃহীত হয়েছেঃ ১০,০০০ ডলার।
যেভাবে শান্তের জন্য যেকোনো পরিমাণ সাহায্য পাঠাতে পারবেনঃ
হ্যাল্প শান্ত এই সাইটে গিয়ে সবার নিচে ডোনেট বাটনে ক্লিক করে বিভিন্ন কার্ডের মাধ্যমে। শান্তের জন্য ফেসবুক পেজ খোলা হয়েছে আপনারা চাইলে ফেসবুক পেজে শান্তের আপডেট পেতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে শান্তের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং সাহায্য কোরতে শান্তের ফেসবুক পেজে ম্যাসেজ করে জেনে নিতে পারেন।
বাংলাদেশ থেকে যেকোনো অংকের সাহায্য পাঠাতে পারেনঃ
রুকসানা কামার, সঞ্চয়ী হিসাব নং ০০৫৩৪০০২৬৩৮, স্ট্যান্ডাড ব্যাংক, তোপখানা রোড শাখা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিকাশ একাউন্টের নাম্বারঃ ০১৭১-৫৮৬৮৪০৮।
নানান চরাই উৎরাই পেরিয়ে কিছু মানুষের মানবিক সহযোগিতায় শান্ত এখন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে। তবে শান্তের উন্নত চিকিৎসা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজন আরো আর্থিক সাহায্য। আমরা কি পারিনা ১৬ কোটি মানুষ মিলে ঐক্য বদ্ধভাবে এই ছোট শিশুকে তার ভবিষ্যৎ ফিরিয়ে দিতে? তবে আর দেরি কেন চলুন এগিয়ে আসি শান্তের জন্য…