দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা অনেক রকম ব্যাঙ দেখেছি। কিন্তু এই ব্যাঙ এক আশ্চর্য ব্যাঙ। যে ব্যাঙ কুমির এমনকি সাপও সাবাড় করে দেয়। এমন এক ব্যাঙের কাহিনী রয়েছে আজকের চিত্র-বিচিত্র লেখাতে।
এমন রাক্ষুসে ব্যাঙ দেখে সবাই হতবাক। বড় ধরনের চিন্তায় পড়েছেন গবেষকরাও। আর এই চিন্তায় পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার দুর্লভ প্রজাতির কুমির কমে যাচ্ছে দেখে তার কারণ উদ্ঘাটন করতে গিয়ে গবেষকদের চোখ ছানা-বড়া! এমন ঘটনাও কি কখনও ঘটতে পারে? গবেষকরা রিতিমতো আশ্চর্য না হয়ে পারেননি। তারা দেখতে পেলেন সামান্য এক প্রজাতির ব্যাঙের কারণেই কমে যাচ্ছে কুমির। শুধু এখানেই শেষ তা নয়। তাদের চোখ এবার কপাল নয়, একেবারে মাথায় তুলে দিলো ওই ব্যাঙেরা। ব্যাঙের কারণে নাকি সাপও কমে যাচ্ছে! অথচ আমরা সবাই জানি ব্যাঙ হচ্ছে সাপের প্রধান খাবার। সাপ সব সময় ব্যাঙ শিকার করে এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ঠিক তার উল্টো ঘটনা। ব্যাঙই সাপকে শিকার করছে। তারা ওই খাবার খেয়েই নাকি সাপ মরছে। আবার মরছে কুমিরও।
ব্যাঙ দেখেই সাপ উল্টো পালাচ্ছে তাও আবার প্রাণের ভয়ে। কোন বিশাল আকৃতির ব্যাঙের সন্ধান মিলেছে এমনও কিন্তু নয়, ব্যাঙের আকৃতি অন্য সব ব্যাঙের মতো স্বাভাবিক। গবেষকরা বলেছেন, এই প্রজাতির ব্যাঙের নাম ক্যান টোয়াড। সাপের মৃত্যুর পিছনে এদের ভূমিকা বিশাল। এমনকি কুমিরও মরছে এদের কবলে পড়ে হরহামেশায়।
এক তথ্যে জানা গেছে, বিস্ময়কর এই ব্যাঙগুলো পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এদের পুরো শরীর শক্ত চামড়ায় ঢাকা। তবে গবেষকরা বলেছেন, এই ব্যাঙগুলো দেখতে বিভৎস্য। শক্ত চামড়ার ওপর আবার রয়েছে কাঁটার মতো শক্ত শক্ত প্রত্যঙ্গ। তবে গবেষকরা বলেছেন, মূল সমস্যা শরীরের কাঁটার মতো শক্ত শক্ত ওইসব প্রত্যঙ্গ নয়। মূল সমস্যা হলো ওই ব্যাঙের বিষের থলি। গবেষকরা বলেছেন, সাপের মতো বিষের থলি আছে এসব ব্যাঙের। আর সেটা রয়েছে ওদের একেবারে মাথায়। সাপ যখন এদেরকে আক্রমণ করে তখন এরা সমস্ত শরীরে বিষ ছড়িয়ে দেয়। এতে সাপের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় না।
চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, বিষাক্ত এই ব্যাঙগুলোর কারণে নাকি এক ধরনের কুমির বিলুপ্ত হতে চলেছে। যদিও কুমিরগুলো সাধারণ কুমিরের তুলনায় বেশ ছোট। পুরুষ কুমির ১ দশমিক সাত মিটার অর্থাৎ সাড়ে ৫ ফুট হয় লম্বায়। আর মেয়ে কুমিররা লম্বায় বেশ খানিকটা ছোট। লম্বায় মেয়ে কুমির দশমিক সাত মিটার অর্থাৎ ২ ফুট ৩ ইঞ্চি। আকারে এরা ছোট বলে এই ধরনের কুমিরকে পিগমি বা স্টান্টেড ক্রোকোডাইল নামে ডাকেন বিজ্ঞানীরা। দুর্লভ প্রজাতির এই কুমিরের সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু জায়গায় কমে যাচ্ছে খুব দ্রুত এবং আশঙ্কাজনক হারে।
গবেষকরা নর্দার্ন টেরিটরির ভিক্টোরিয়া এবং বুলো নদীর কুমির নিয়ে গবেষণা করে রীতিমতো শঙ্কিত। একটি এলাকায় ২০০৭ সালের প্রথম দিকে ছিল ২৮টি পিগমি কুমির। এক বছরের মধ্যেই কমে যায় অর্ধেকেরও বেশি। শুনলে অবাক হতে হয়- ১৮টি কমে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ১০টি। তখনই এর কারণ খুঁজতে শুরু করেন নানা গবেষকরা। তখন কারণ খুঁজতে গিয়েই উঠে আসে বিশেষ প্রজাতির ব্যাঙের বিশেষ ধরনের মরণফাঁদের খবর। গবেষকরা মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন যে, ওই বিষাক্ত ব্যাঙের ঝাঁক আসার পর থেকেই কুমির কমতে শুরু করেছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, কুমিররা বিকল্প খাদ্যের অভাবে ব্যাঙগুলো ধরে ধরে খায়, আর ওই ব্যাঙের মাথায় থাকা বিষ কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের মরণ ডেকে আনে। আর এভাবেই কমে যাচ্ছে কুমির। গবেষকরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে নিশ্চিত হয়েই বিষয়টি জনসমক্ষে এনেছেন।
গবেষকরা বলেছেন, এই ব্যাঙগুলো নাকি পূর্ব-দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার দিকে এগুচ্ছে। তবে গবেষকরা আশ্বস্ত হয়েছেন এই ভেবে যে, আর যাই হোক, ব্যাঙগুলোর চলার গতি কিন্তু অনেক কম। বছরে মাত্র ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে এ ব্যাঙেরা। যে কারণে কিছুটা হলেও স্বস্তিতেও আছেন বিজ্ঞানীরা। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।