ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিদেশ থেকে আমদানি করা ‘র’ চিনি খেয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
প্রকাশ, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত হাইড্রোজেনযুক্ত ‘র’ চিনি অবাধে বিক্রি হচ্ছে। আর এ চিনি খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে দেশী চিনি অবিক্রীত থেকে গিয়ে উত্তরাঞ্চলের চিনিকলগুলোসহ দেশের ১৫টি চিনিকল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ‘র’ চিনি ও এ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি ও খাদ্যদ্রব্য খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। মূলত ‘র’ চিনি রিফাইন করে বিক্রির কথা থাকলেও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী তা না করে সরাসরি বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর এতে করে নানা সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিদেশী চিনি আমদানির ফলে শুধু রাজশাহী চিনিকলে এখন প্রায় ৫০ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে মিলটিকে। গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল চিনি মিলেও প্রায় ৬৫ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত রয়েছে এবং পাবনা চিনিকলে ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে।
লোকসানের অন্যতম কারণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন চিনিকলের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আখ চাষে এ অঞ্চলের কৃষকদের আগ্রহ না থাকা। এছাড়া যারা আখ চাষ করছেন, তারা চিনিকলে আখ সরবরাহ না করে অবৈধভাবে নিজেরা গুড় উৎপাদন করে থাকেন। কারণ মিল এলাকায় গুড় উৎপাদন আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও কৃষকরা তা মানছেন না। অধিক মুনাফার লোভে অনেক কৃষক এই ধরণের বেআইনী কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া বাজারের চেয়ে চিনি মিলগুলোর উৎপাদিত চিনির দাম অতিরিক্ত নির্ধারিত হওয়ায় এবং সর্বোপরি একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কম দামে ‘র’ চিনি আমদানির মাধ্যমে দেশের বাজার নষ্ট করে পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে।
রাজশাহী চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, চিনিকলটির কাছে কোন শ্রমিক বা আখচাষীর কোন পাওনা নেই। চলতি বছরে সুগার কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) চিনিকলটির জন্য ৩০ কোটি টাকা দেয়। সে টাকা থেকে সব পাওনা পরিশোধ করা হয়।
এদিকে পাবনা চিনি মিলে ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত পড়ে আছে। চিনি বিক্রি না হওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকরা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাবনা চিনি মিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদেশী ঋণসহ নানা কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিল প্রশাসন। তার ওপর সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কতিপয় ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গোছানোর স্বার্থে বিদেশ থেকে কম দামে, অনুন্নত হাইড্রোজেনযুক্ত ‘র’ চিনি আমদানি ও বিক্রি করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে করে দেশীয় মিলগুলোতে উৎপাদিত উন্নতমানের চিনি বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্রেতারা না বুঝেই কিছু কম দাম পেয়ে বিদেশী চিনি কেনার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। একই সঙ্গে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাদ্যপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিদেশী চিনি ব্যবহার করে ব্যবসায়িকভাবে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। পক্ষান্তরে ওইসব চিনি দিয়ে প্রস্তুতকৃত মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য খেয়ে মানুষ নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন এই চিনি খেলে অন্ত্রের ক্যান্সার হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করতে হবে এবং উন্নতমানের দেশীয় চিনি ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। চক চক করলেই যেমন সোনা হয় না, তেমনি বিদেশী চিনি বেশি সাদা দেখালেই স্বাস্থ্যসম্মত হয় না বলেও ওই মহলটি মনে করেন। তাছাড়া দেশী চিনি উন্নতমানের চিনি। এই চিনিতে মিষ্টিও বেশি।
এ ব্যাপারে পাবনা চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুপস্থিত থাকায় তার দপ্তর হতে ৪১ কোটি টাকার চিনি অবিক্রীত এবং ২ মাসের বেতন বন্ধের সত্যতা স্বীকার করা হয়।