রাজনীতি ও জনগণ এখন পুরোপুরি মুখোমুখি। কারণ জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত ৩ সপ্তাহের হরতালে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছে।
রাজনীতির ইতিহাস যে শিক্ষা দেয় তা দেখে বোঝা যায় রাজনীতি ও জনগণ একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সেই রাজনীতির সংজ্ঞা এখন পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে। জনগণের জন্য যে রাজনীতি সেই রাজনীতি এখন ক্ষমতায়নের এক ‘হরিলুট’এ পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখা আর ক্ষমতায় যাওয়া এই দুটিই এখন প্রধান লক্ষ্য।
কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠি নয়, রাজনীতির এই সংজ্ঞা পরিবর্তন দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরএর অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বুয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলন এ সবই হয়েছিল জনগণের জন্য। সে সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না থাকলে জনগণ কিভাবে নিষ্পেষিত হতো তা ভাবাও যায় না। আর এখনকার অবস্থা একবার ভাবুন?
আমাদের দেশের বর্তমান নেতা-নেত্রীরা জনগণের কথা বলছেন, দেশের কথা বলছেন। কিন্তু আসলেও কি তারা জনগণের কথা ভাবছেন? যদি তাই হতো তাহলে আলোচনায় বসে মিমাংসা করতেন। তাহলে হরতাল, ভাংচুর আর জ্বালাও-পোড়াও করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এখন আর কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার কথাও ভাবা হয়না, দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা কিংবা দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের দুর্গতির কথা ভাবা হয় না। একপক্ষ হরতাল দিয়ে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থায় উপনিত করেছেন। আর অপরপক্ষ বিষয়টির মিমাংসায় না গিয়ে দেশকে হরতাল-ধর্মঘটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। দুই পক্ষই সমান দোষি- অন্তত সাধারণ জনগণ তাই মনে করে।
অবস্থাদৃষ্ঠে মনে হচ্ছে জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন সময় এসেছে জনগণের কথা বিবেচনায় এনে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। গত দুইদিনে কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখা যাচ্ছে দুটি দলের মধ্যেই। শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই। এই বধোদয় যতক্ষণ সকলের মধ্যে না আসছে ততক্ষণ কোন উন্নতি হবে না দেশের তথা দেশের মানুষের। যে সুযোগ আজ দুটি দলের মধ্যে এসেছে সেই সুযোগ যদি তারা কাজে লাগান তাহলে ভালো, নইলে উভয় দলই একসময় জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। অন্তত ইতিহাস তাই বলে।
# কার্টুন: সাদাত।