দি ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে ব্যাপক আকারে পড়েছে। বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর তাই সরকার এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তৈরি করতে যাচ্ছে একশ বছরের পরিকল্পনা।
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় একশ বছর মেয়াদি এক দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সরকার। দেশের পানিসম্পদ নিয়ে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ শীর্ষক এ পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা দিচ্ছে নেদারল্যান্ডস। জলবায়ু বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় নেদারল্যান্ডস দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দেবে। এ লক্ষ্যে ২২ মে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত্ব এ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এবং নেদারল্যান্ডসের পক্ষে বৈদেশিক সহায়তাবিষয়ক মন্ত্রী স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে ১৩ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, শুধু পরিকল্পনা তৈরিই নয়, এটি বাস্তবায়নের জন্যও অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। ১৪ মে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসে লোকাল কন্সালটেটিভ গ্রুপের (এলসিজি, ওয়াটার) বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকাসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, দেশের টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ইস্যুগুলো যথাযথভাবে বিবেচনা করে দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে, পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন ছক প্রণীত হবে। বাংলাদেশের বদ্বীপভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা হবে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করে করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এ পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও মান উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনা হবে। একক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দ্বৈততার সৃষ্টি হয়ে সম্পদের অপচয় হচ্ছে বলেই ৫০ বছর মেয়াদি কোন পরিকল্পনা গ্রহণ না করে একশ বছর মেয়াদি একটি সমন্বিত পরিকল্পনা করা হচ্ছে জানিয়ে ডেল্টা প্ল্যান তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সরকার সাম্প্রতিক কয়েক দশকে পানি সম্পদ, কৃষি, ভূমি ব্যবহার, মৎস্য ও বনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিকল্পনা, নীতি, কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ন্যাশনাল ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান, হাওয়ার মাস্টার প্ল্যান, এগ্রিকালচার মাস্টার প্ল্যান ফর সাউদার্ন রিজিয়ন এবং জাতীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। এ পরিকল্পনাগুলো কাঙ্ক্ষিত হারে উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না। একই সঙ্গে, বাংলাদেশের জন্য এ রকম একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা উচিত বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ চুক্তিতে বিশ্বব্যাংক ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। এ জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
্
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে দাবি জানিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষতির ক্ষতিপূরণের জন্য।