দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক॥ পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘন বসতির দেশ চীন, ১৯৭৯ সালের পর চীনে পরিবার প্রতি এক সন্তান গ্রহনে আইন পাস হয় এবং এর পরে চীনে বেশিরভাগ পরিবারে একজন করে সন্তান রয়েছে কিন্তু এতে কি চীনের সামাজিক অবস্থানের কোন পরিবর্তন এসেছে? চলুন জেনে নেই বিস্তারিত …
১৯৭৯ সালে চীনে এক সন্তান নীতির আলোকে আইন পাশ হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিল এবার চীন নিজের জনসংখ্যার বিস্ফোরণের লাগাম টেনে ধরতে পারবে, হ্যাঁ তারা এই আইনের সুফল ও ধীরে ধীরে পেতে থাকে জনসংখ্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে বর্তমানে, গ্রাম্য এলাকা সমূহ বাদ রেখে বর্তমানে আধুনিক চীনে একের অধিক সন্তান রয়েছে এমন পরিবার খুব কম পাওয়া যাবে আগে চীনে যেখানে পরিবার প্রতি ৪ সন্তান গ্রহণ স্বাভাবিক ছিল বর্তমানে সেই ধারা থেকে চীন বেড়িয়ে এসেছে তবে একক সন্তান গ্রহণ নীতি চীনের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ পারিপার্শ্বিক নানান বিষয়ে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই রকমের প্রভাব ফেলেছে।
আগে চীনের একই পরিবারে অনেক সন্তান থাকাতে সকল সন্তানের জন্য শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া পিতামাতার জন্য অনেক কঠিন কাজ ছিল ফলে পরিবার থেকে একজন সন্তান গড়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারত কিন্তু বর্তমানে এই সমস্যা অনেকটাই লাঘব করা গেছে, এখন পরিবার প্রতি একটি সন্তান থাকাতে চীনা পিতামাতা তাদের একমাত্র সন্তানকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে সব সুবিধাই প্রদান করতে পারেন।
আগে স্বাস্থ্য খাতে নানান সমস্যায় পরতে হত চীনা পরিবারকে, কারণ আগে গড়ে সেখানে পরিবার প্রতি ৪ জন সন্তান জন্ম নিত ফলে সে সময় প্রত্যেক শিশুর স্বাস্থ্য সেবা এবং পরিপূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করা পিতা মাতার জন্য দুর্বহ ছিল, বর্তমানে একমাত্র সন্তানের জন্য পিতা মাতা খুব সহজেই স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারেন।
এদিকে এক গবেষণা পরিচালিত হয় চীনের ১৯৭৯ সালের এক সন্তান গ্রহণ আইনের পরে যেসব সন্তান জন্মলাভ করেছে এবং যাদের কোন ভাই বোন নেই তাদের উপর, গবেষণা প্রায় ২,২৭৩ জন একক সন্তান অর্থাৎ পিতা মাতার এক মাত্র সন্তানের উপর পরিচালিত হয়। বিভিন্ন ভাবে এসব একক সন্তানদের মানসিক শারীরিক এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা গবেষণায় বিবেচনা করা হয়।
এখানে দেখা যায় ১৯৭৯ সালের আইন পাশ হওয়ার পর অনেক পিতা মাতা একক সন্তান গ্রহণ করেন কিন্তু তাদের পরিবার যৌথ ছিল। ফলে ঐ সব একক সন্তান যখন বড় হতে থাকে তারা প্রথম দিকে নিজেদের চাচাতো, মামাতো ভাই বোনদের সাথে বেড়ে উঠতে থাকে কিন্তু ধীরে ধীরে এক সময় প্রতি পরিবারে একক সন্তান গ্রহণের ফলে কাজিন বলতেও আর কিছুই থাকেনা এভাবে চীনের নতুন প্রজন্ম একা হয়ে যেতে থাকে। পরিবারের এক মাত্র সন্তান হিসেবে একাকীত্ব চীনের অধিকাংশ পরিবারের সন্তানদের উপর ভর করতে থাকে। তবে চীনের একক সন্তান নীতিতে সবচেয়ে বেশি সুবিধা হচ্ছে সন্তান’রা শিক্ষিত হয়ে উঠছে আগে যেখানে অনেক সন্তানের ক্ষেত্রে শিক্ষা বিষয়ে পিতামাতা জোর দিতেন না, একই সাথে চীনের স্কুল সমূহ আগের থেকে অনেক বেশি সুবিধা দিতে পারছে তাদের ছাত্র ছাত্রীদের।
এদিকে অন্য আরেক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে একক সন্তান গ্রহণের আইনের ফলে সেখানে বর্তমান প্রজন্মের সন্তানদের মাঝে নানান হতাশা এবং নীতিহীন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে চীনের বর্তমান উন্নতি এবং শিক্ষার অবস্থা বিবেচনা করলে আগের থেকে এখন চীন অনেক উন্নত সেখানকার জনগণও আগের চেয়ে অনেক সচেতন, চীন তার একক সন্তান নীতি নিয়ে কতোটা সফল হচ্ছে তা বিতর্কের বিষয়, হয়ত এক সময় চীনের এই নীতি ভালো কিংবা খারাপ যেভাবেই হোক ইতিহাসে যায়গা করে নিবে।
সূত্রঃ বিবিসি