দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডিম খান না এমন লোক মনে হয় পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে সকালের নাশতায় ডিম ছাড়া কি চলে? চলে না। এই ডিম নিয়ে দুনিয়া জোড়া মাতামাতি নিয়েই আজকের কাহিনী।
ইংরেজদের তো ডাবল ডিমের মামলেট ছাড়া দিনের শুরুই হয় না। দুনিয়ার সব জাতিই কমবেশি ডিমনির্ভর। মানে ডিম তাদের খেতে হবেই। না খেয়েই বা উপায় কী। পুষ্টির অনেকখানির জোগান আসে এই ডিম থেকে। ডিমের দাম বাড়ুক বা কমুক, ডিম চাই-ই চাই। কেবল সকালের নাশতায় নয়, ডিমের ব্যবহার বেড়েছে নানাভাবে। রুটি, কেক, বিস্কুট- যাই বলা হোক না কেন, ডিম ছাড়া কিন্তু বানানো সম্ভব নয়। এমনকি ঘরে বানানো পিঠাতেও ডিম দরকার।
ইদানিং দুনিয়াজুড়ে বার্ড ফ্লু আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ভয়ে অনেকে মুরগি থেকে দূরে থাকেন। এমনকি দূরে থাকেন ডিম থেকেও। যদিও গবেষকরা বলছেন, বার্ড ফ্লু ডিমের ওপর কোন প্রকার প্রভাব ফেলে না। মানে বার্ড ফ্লুর সময়ও আপনি ডিম খেতে পারেন অনায়াসে। তবে সতর্কতা হিসেবে আধা সেদ্ধ কিংবা ডিমের অমলেট না খেয়ে সেদ্ধ বা মামলেট খেতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ ডিমের কুসুম যাতে ভালোভাবে সেদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডিমপ্রিয় মানুষদের কাছে ডিম হলেই চলে। আধা সেদ্ধ বা সেদ্ধ- কোনোটাতেই তাদের আপত্তি নেই তাদের। অবশ্য কেও কেও বার্ড ফ্লুর ভয়ে ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। আপনি যদি ডিম না খাওয়াদের দলে থাকেন, তবে আপনি কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক ভিটামিন থেকে। ডিমে রয়েছে সব ভিটামিন, খনিজ ও প্রয়োজনীয় প্রোটিন উপাদান। এই ডিমে নেই কেবল ভিটামিন সি। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি মুষ্টিমেয় যে সামান্য কয়েকটা খাবারে পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে ডিমের কুসুম অন্যতম।
ডিমের রকম ফের
ডিমেরও রঙের কী বাহার দেখা যায়। কোনো ডিম সাদা, কোনো ডিম লালচে বাদামি, আবার কোনো কোনো ডিম হালকা আকাশি। তবে ডিমের রঙের কারণে কিন্তু ডিমের পুষ্টি, উপাদান, গন্ধ, স্বাদ এমনকি রান্নার ধরনও পরিবর্তন হয় না একেবারেই। ডিমের রঙ নির্ভর করে মুরগির উপর। যদি মুরগির পালক ও মুরগির কানের লতি বাদামি হয়, তবে সে মুরগি বাদামি রঙের ডিম পাড়বে। যে মুরগির পালক আর কানের লতি সাদা- সে মুরগি পাড়ে সাদা রঙের ডিম। তবে লালচে বাদামি ডিম সাদা ডিমের চেয়ে আকারে সামান্য বড় হওয়ার কারণে এর উপাদানও বেশি হয়ে থাকে। তাই দামটাও সাদা ডিমের চেয়ে একটু বেশিই হয়।
ডিমের উৎপাদন কোন দেশে বেশি
একটি কথা রয়েছে, যে দেশে মানুষ বেশি সে দেশে ডিমের উৎপানদও বেশি হওয়ার কথা। কারণ মানুষের নিত্যদিনের খাবার হিসেবে ডিমের স্থান সম্ভবত সবার উপরে-অন্তত বিশেষজ্ঞরা তাই মনে করেন। এ কারণেই ডিম উৎপাদন পৃথিবীতে প্রথম স্থান দখল করে আছে চীন। চীনে প্রতিবছর ১৬০ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। আর একেকটা মুরগি গড়ে প্রতিবছর ডিম দেয় আড়াইশ’ করে।
ডিমের খোলস ও জাত রহস্য
ডিমের খোলস তো একটা বিরাট রহস্য। যতই ভঙ্গুর হোক, ডিমের একেকটি খোলসে আছে প্রায় ১৭ হাজারের বেশি স্তর। পৃথিবীতে মুরগি আছে প্রায় ১৫০ জাতের। এদের সবাই ডিম পাড়ে। ডিম আগে না মুরগি আগে, এ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে বিতর্কের শেষ নেই। গবেষকরা সে বিতর্কের অবসানও ঘটিয়েছেন ইতিমধ্যেই। ডিম নয়, মুরগিই আগে। আর মুরগির পূর্বপুরুষ বা পূর্বমাতা যা-ই বলুন না কেন, তারা হচ্ছে লাল রঙের জঙ্গল ফাউল নামে পরিচিত। এই জঙ্গল ফাউলরা এশিয়ার বাসিন্দা। এশিয়া থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে বাকি মহাদেশগুলোয় এমনই শোনা যায়। তাছাড়া মানুষদের পোষা প্রাচীনতম প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুরগি। চীনারাই সবার আগে মুরগি পুষত বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার ৪০০ বছর আগে থেকে এই মুরগি পালা শুরু হয় বলে ধারণা। এই ছিল মোটামুটি ডিমের দুনিয়ার কাহিনী। যে কাহিনী হয়তো আমাদের জানা ছিল না- আজ জানা গেলো সে কাহিনী। সৌজন্যে: দৈনিক যুগান্তর অনলাইন