দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবরোধে গাড়ি পোড়ানো যেনো এক প্রতিযোগিতার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেভাবেই হোক গাড়ি পোড়াতেই হবে- এটি যেনো ওইসব সন্ত্রাসীদের মূল টার্গেট। সেখানে কোন অন্ত:সত্ত্বা মহিলার কোন আর্তনাদ তাদেরকে এতটুকু টলাতে পারেনি।
সর্বশেষ:
চুলার আগুনে দগ্ধকে অবরোধের বলি বানানোর চেষ্টা
বিরোধী দলের অবরোধের মধ্যে সোমবার দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসেন তার স্বামী, যেখানে অবরোধে গাড়িতে দেয়া আগুনে দগ্ধ অনেকে চিকিৎসাধীন।
শিরিন আক্তার (১৯) নামের ওই নারী সকালে রাজধানীর ডেমরা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো নতুন সেতুর কাছে হিউম্যান হলারে দেয়া আগুনে দগ্ধ হন বলে তার স্বামী মো. শাহীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন।
পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই সময় ওই এলাকায় কোনো হিউম্যান হলারে আগুন দেয়া হয়নি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন স্বীকার করেন, তার স্ত্রী বাসার চুলার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। সরকারের সাহায্য পাওয়ার আশায় মিথ্যা বলেছিলেন তিনি।
পূর্বে প্রকাশিত
গার্মেন্টস কর্মী শিরিনার বাসা রাজধানীর ডেমরা ডগাইর বড়ভাঙ্গা এলাকায়। সেখান থেকে শিরিনা তারাবোর সিনহা গার্মেন্টসে মিনিবাসে যাওয়ার সময় সুলতানা কামাল ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে পিকেটারদের কবলে পড়ে ওই মিনিবাসটি।আগুন দেওয়ার সময় বুঝতে পেরে তাদের অনেক কাকুতি মিনতি করেছিলেন শিরিনা বেগম। ‘ভাই, ভাইরে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমার পেটে ৬ মাসের বাচ্চা আছে। আমাকে বাস থেকে নামতে দাও। আগুন দিলে পরে দিও।’ সন্তানের জন্য নিজেকে বাঁচাতে হাতজোড় করে এই আকুতি জানিয়েছিলেন গার্মেন্টস কর্মী শিরিনা বেগম। কিন্তু পাষণ্ড পিকেটারদের মন গলেনি। আগুনে ঝলসে এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন শিরিনা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় গোঙ্গাচ্ছেন শিরিনা। নিজের কথা যতটা না ভাবছেন, তার চেয়ে বেশি ভাবছেন অনাগত সন্তানের কথা। বার বার ডাক্তার-নার্সদের কাছে জানতে চাইছেন, আমার সন্তান ভালো আছে তো? শত চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিত্সকরা কোন আশার বাণী শোনাতে পারছেন না শিরিনাকে। আলট্রাসনোগ্রামসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিত্সকরা জানতে পেরেছেন নিষ্ঠুর আগুনের আঁচ লেগেছে শিরিনার পেটের সন্তানের গায়েও। গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা জানান, শিরিনার পেটের সন্তানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তার খুব শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।
নিষ্পাপ মাতৃভ্রণও আজ এক নির্মমতার শিকার হয়েছে। কিন্তু আর কত? এরপরও কি কারো বধোদয় হবে না? এমন নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হবে তা হয়তো জানতেন না শিরিনা বেগম। কিন্তু এরজন্য দায়ি কে? কাকে দায়ি করবে এই সভ্য সমাজ? কার কাছে বিচার চাইবে শিরিনার মতো আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষগুলো? এসব প্রশ্নের জবাব কেউ হয়তো দিতে পারবেন না।