ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহিলাদের জন্য সবখানেই পৃথক ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। আর সেটাই স্বাভাবিক নিয়ম। বাসে উঠলেই দেখবেন সেখানে লেখা রয়েছে ৬ সিট মহিলা। এমনভাবে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে গেলে দেখবেন মহিলাদের জন্য পৃথক টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রাজধানীর বেশিরভাগ থানায় নারী হাজতখানা না থাকায় বিপাকে পড়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, মহিলাদের জন্য পৃথক কোন হাজতখানা না থাকায় গ্রেফতার হওয়া নারীদের রাখা হচ্ছে পুরুষ হাজতখানায়। এমনকি থানার স্টোর রুমেও রাখা হচ্ছে নারীদের। এ কারণে নারী আসামিরা সীমাহীন দুর্ভোগ ও নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোগান্তির পাশাপাশি রয়েছে হয়রানি-টিপ্পনিসহ নানা অযাচিত আচরণ। এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিরও অভিযোগও ওঠে অনেক সময়। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি মহিলা আসামিদের যথাযথ মর্যাদার সঙ্গেই রাখা হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গ্রেফতারকৃত নারী আসামিদের সম্মানের সঙ্গে রাখা হচ্ছে না। মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে। রাজধানীর কয়েকটি থানায় সরেজমিন দেখা গেছে নানা অব্যবস্থাপনা। থানাগুলোতে নারী আসামিদের জন্য আলাদা হাজতখানা না থাকার পাশাপাশি আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থাও দেখা যায়নি। ফলে পুরুষদের জন্য থাকা টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়েও নারী হাজতিদের নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। গেণ্ডারিয়া থানায় গিয়ে নারী হাজতখানা দেখা যায়নি। নারী হাজতখানাটি অফিস কক্ষ বানানো হয়েছে। নারী আসামিদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। নির্ঘুম রাত কাটে তাদের। নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ ব্যাপারে গেণ্ডারিয়া থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, আমাদের থানায় কক্ষ সংকট। নারী হাজতখানাটি অফিস কক্ষ করা হয়েছে। সাধারণত থানায় পুরুষ আসামিদের তুলনায় নারী আসামি খুবই কম থাকে। যদি কখনও নারী আসামি হয় তখন ওই অফিস কক্ষের কাজ বন্ধ করে নারী আসামি রাখা হয়। আমরা তাদের যথাযথ সম্মানের সঙ্গেই রাখি। নিউমার্কেট থানায় গিয়ে দেখা যায়, নারী হাজতখানা নেই। তবে শিশু ও কিশোরদের থাকার জায়গায় নারীদের রাখা। আলাদা টয়লেট ব্যবস্থাও নেই। মিরপুর, পল্টন, রমনা ও গুলশান মডেল থানায় মহিলা হাজতখানা থাকলেও সেগুলো রয়েছে নাজুক অবস্থায়।
শাহ আলী ও দারুস সালাম থানায় নারী হাজতখানা না থাকায় নারী আসামিদের ডিউটি অফিসারের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। কখনও কখনও রাতে তাদের মিরপুর থানায় নিয়ে রাখা হয়। দারুসসালাম থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিজ দায়িত্বে নারী আসামিকে মিরপুর থানার নারী হাজতখানায় রেখে আসে। রিমান্ডে থাকা নারীদের কিভাবে রাখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহিলা পুলিশের দায়িত্বে ডিউটি অফিসারের কক্ষে অথবা অন্য কোন পুলিশ অফিসারদের কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। মিরপুর থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, শাহ আলী ও দারুস সালাম থানার নারী আসামিদের কখনও কখনও মিরপুর থানায় রেখে যায় তারা। পল্লবী থানায় গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি অফিসারের কক্ষের পেছনে স্টোর রুমেই রাখা হয় নারী আসামি। সেখানে মালামালও রাখা হয়। পল্লবী থানার ওসি আবদুল লতিফ বলেন, নারী হাজতখানা না থাকায় স্টোর রুমেই রাখতে হচ্ছে। সবুজবাগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখাণ থানায়ও একই অবস্থা। নারী আসামিদের ডিউটি অফিসার বা অন্য কক্ষে রেখে সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা অপারেশন অফিসারের কক্ষে রেখে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এ পরিস্থিতিটা পুলিশের জন্যও বেশ ঝামেলা ও ঝুঁকিপূর্ণ। তেমনি নারী আসামিদের জন্যও বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নারী আসামিদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, পুরুষ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে বসে রাত কাটাতে খুবই অস্বস্তি হয়। তাছাড়া কথায় কথায় গালাগাল, লাঠি দিয়ে খোঁচা মারা, ধাক্কা দিয়ে টেবিলের কোনায় বসিয়ে দেয়ার মতো নানা অযাচিত আচরণের শিকার হতে হয়।
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ছোট কক্ষে কিংবা পুলিশের কক্ষে নারী আসামিদের রাখার কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নারী হাজতখানা ও নারীদের আলাদা প্রিজন ভ্যানের জন্য দাবি করে আসছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। থানায় নারীদের শ্লীলতাহানীর ঘটনাও ঘটছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নারীদের যথাযথ মর্যাদা দিয়েই থানায় রাখতে হবে। যেসব থানায় নারী হাজতখানা নেই সেসব থানায় জরুরিভিত্তিতে নারী হাজাতখানা করার দাবি জানান তিনি।
এভাবেই মহিলা হাজতখানা ছাড়াই চলছে বেশির ভাগ থানার কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।