দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গত কয়েকমাস ধরেই দেশজুড়ে যে সহিংসতা চলছে, তাতে দেশের সাধারণ মানুষ দিশেহারা। আবার নতুন করে ২৯ ডিসেম্বর নিয়ে শুরু হয়েছে আরেক অনিশ্চয়তা। এর শেষ কিভাবে হবে তা কেওই জানেনা।
সমগ্র দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে। কারণ একটাই তা হলো ২৯ ডিসেম্বর। আসলে ২৯ ডিসেম্বর কি হবে তা নিয়ে শুধু রাজধানীবাসী নয়, সমগ্র দেশজুড়ে উদ্বেগ বেড়েছে। সরকার সমাবেশ করতে দেবে না সেটি পরিষ্কার। অপরদিকে বিরোধী দলও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা যে কোন মূল্যে সমাবেশ করবেনই। এমন এক মুখোমুখী অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে এদেশের রাজনীতি।
এখন যেটি দেখা যাচ্ছে, আর তা হলো চরম সহিংসতার আভাস মিলছে এমন মনোভাবের কারণে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শেষ হাতিয়ার ব্যবহারের চেষ্টা করবেন এটি সেই স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে যদি ধরা যায় তাহলে কি দাঁড়াবে তা কল্পনা করা দু:সাধ্য ব্যাপার।
ইতিমধ্যেই ১৮ দলীয় জোটের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ধরপাকড় শুরু হয়েছে। রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে আগত যাত্রীদের ব্যাপকভাবে তল্লাশী করছে পুলিশ। বোর্ডারদের যাচাই-বাছাই করে হোটেলে থাকার অনুমতি দেয়ার জন্য ঢাকার সব হোটেল কর্তৃপক্ষকে অলিখিত নোটিস দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। যানবাহন থামিয়ে বাসে উঠে সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশী শুরু করেছে পুলিশ। এ অবস্থায় আগামীকাল ঢাকায় কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তাই নিয়ে জনমনে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া বলেছিলেন, অভিযাত্রা হবে নির্বাচনী প্রহসনকে ‘না’ বলতে, গণতন্ত্রকে ‘হ্যাঁ’ বলতে। সেখানে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, সারা দেশের দলমত, শ্রেণী-পেশা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ‘সক্ষম নাগরিকদের। বিএনপির নীতিনির্ধারক ফোরামের এক নেতাও সেই কথার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, চলমান সঙ্কটের বিষয়টি বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সতর্ক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত সংলাপটি ব্যর্থ হওয়ার পর দেশের হালনাগাদ পরিস্থিতি, সরকার ও বিরোধী দলের অবস্থান, দৃষ্টিভঙ্গি ও কৌশল, সাধারণ মানুষের অবস্থান বিশ্লেষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশ ও সংস্থার কাছে প্রতিবেদন পাঠাচ্ছেন। কারণ বাংলাদেশের সঙ্গে আগামী দিনগুলোতে কাজ করতে নিজেদের অবস্থান ও করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। বিএনপির ওই নেতা জানান, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে সকল আন্তর্জাতিক মহল। বিএনপি মনে করে, অনানুষ্ঠানিকভাবে তারা ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ পর্যবেক্ষণ করবেন। ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে গণভোটের মতো। তারা দেখতে চায় ওইদিন দেশের মানুষ কি মনোভাব প্রকাশ করে। এ কর্মসূচিতে সরকারের দমন-পীড়ন ও বিরোধী দলের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ কৌশল ও করণীয়-অন্তত বিএনপির নেতারা এমনটিই মনে করছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ১৮ দলের কর্মসূচি প্রতিরোধের আহবান জানান। আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা শেষে একই দিনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমও একই মনোভাব ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধী দলকে কোন সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার তার প্রথম নির্বাচনী জনসভায় বলেন, ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেত্রী মানুষ মারার আয়োজন করেছেন বলে মন্তব্য করেন।
অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন গতকাল এক ভিডিও বার্তায়, দেশবাসী যে কোন বাধা উপেক্ষা করে ২৯ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সরকারের কঠোর অবস্থান ও আগামীকালের সমাবেশের অনুমতি না দেয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছেন। এদিকে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার ঘোষিত রাজধানীমুখী ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ভণ্ডুল করতে এই সরকার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৮দল নেতারা কর্মসূচির সাফল্য নিয়ে আশাপ্রকাশ করে বলেন, মার্চ ফর ডেমোক্রেসির মাধ্যমে দেশবাসী তাদের মতামত প্রকাশ করবে। সরকার বাধা দিয়ে উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত করতে পারলেও জনমত পরীক্ষা ঠেকাতে পারবে না। কারণ বাধা দিলে সংঘাত সৃষ্টি হবে, মানুষের ক্ষোভ বাড়বে, যা অনিবার্যভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। তাই বিরোধী দলের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অগ্রযাত্রায় মানুষের ঢল নামানো। সরকার বাধা না দিলে জাতীয় পতাকা নিয়ে সমাবেশের বিশ্ব রেকর্ড হবে ২৯শে ডিসেম্বর- এমনটাই মনে করছে বিএনপির নেতারা।
উভয় পক্ষের নিজ নিজ অবস্থানের এমন মনোভাব- দেশের সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে ভাবিয়ে তুলেছে। মানুষ হিংসা, হানাহানি আর সহিংসতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে চায়না। মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনীতি পরিণত হয়েছে এগিয়ে থাকার প্রতিযোগিতায়। যেখানে দেশের সাধারণ মানুষ না খেয়ে থাকলেও বা মরলেও তাদের কিছু যায় আসে না। সেখানে এমন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জনগণের চোখের ঘুম হারাম হওয়ারই কথা। এখন বাকিটা দেখার জন্য আগামীকাল ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সৃষ্টিকর্তার নাম জপা ছাড়া সাধারণ জনগণের আসলে করার বা বলার কিছুই নেই!