দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সারা বিশ্বেই যেনো মুসলিম দেশগুলোতে চলছে এক অস্থিরতা। প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, লিবিয়া, মিশর, সিরিয়াসহ অসংখ্য মুসলিম দেশগুলোতে চলছে এক অস্থিরতা।
এবার ক্ষমতার মসনদে থেকে থাকা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট পড়েছেন সেই জাঁতাকলে। বিদ্রোহীদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়লে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করতেও দ্বিধা করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির সরকার পক্ষ ত্যাগ করা শীর্ষ এক রাজনীতিবিদ। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন আশংকার কথা জানিয়েছেন ইরাকে নিযুক্ত সিরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত নায়েফ আল ফারেস। তিনি আরও বলেন, অনিশ্চিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে আভাস পাওয়া গেছে, ইতিমধ্যেই আসাদ সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। ফারেস গত সপ্তাহে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান এবং বাশার আল আসাদের পক্ষ ত্যাগ করে বিরোধী পক্ষে যোগ দেন।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব পাস করাতে তৎপর হয়ে উঠেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে রাশিয়া আগাম জানিয়ে দিয়েছে, তারা এতে ভেটো দেবে। জানা গেছে, আসাদবাহিনী দেশটির রাজধানী দামেস্কে সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে। রাজধানীর আশপাশে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। আন্দোলনকারীরা বলছে, রাজধানী ঘিরে এই সংঘর্ষ ১৬ মাস ধরে চলা অভ্যুত্থানের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। খবর সংবাদ সংস্থার।
সিরিয়ায় থাকা রাসায়নিক অস্ত্রের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো ও পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বাশার এ অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন কি না, বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে আল ফারেস বলেন, তিনি এ আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসাদ এখন আহত নেকড়ে ও কোণঠাসা। নিজের জন্য তিনি সবকিছুই করতে পারেন।’ আল ফারেস দাবি করেন, ‘হোমস শহরের অংশবিশেষে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহূত হয়েছে বলে অসমর্থিত তথ্য আছে।’ আসাদের পক্ষত্যাগী এই সাবেক রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেন, আল কায়দার সুন্নি মুসলিম জঙ্গিরা সিরিয়ার বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করছে। এ ধরনের দাবির পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে এমন অনেক নজির আছে, স্বার্থের কারণে অনেক শত্রুও এক হয়ে যায়।’
আল ফারেস দাবি করেন, ‘সক্রিয়তা ও সমর্থনের জন্য আল কায়দা জায়গা খুঁজছে। আর সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির আন্দোলনরত জনগণকে দমানোর পথ খুঁজছে।’ তিনি দাবি করেন, সিরিয়ার কর্তৃপক্ষ আল কায়দার সহযোগীদের দিয়ে বিভিন্ন শহরে বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আসাদকে একমাত্র জোর করেই ক্ষমতা থেকে সরানো যেতে পারে। রাজধানী দামেস্কের চলমান লড়াইকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একে আসাদ সরকারের পতনের শুরু বলে বর্ণনা করেন আল ফারেস। উল্লেখ্য, সিরিয়ার চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন বিদ্রোহে প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষত্যাগী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজধানীবিদ হচ্ছেন ফারেস। তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন বাথ পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। শক্তিশালী নিরাপত্তা বিভাগ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনী ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। উভয় পক্ষের মধ্যকার যুদ্ধ ক্রমেই দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রাজধানী দামেস্কের দক্ষিণাংশের কয়েকটি এলাকায় সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়েছে। বিদ্রোহী বাহিনী ও সরকারি সেনাদের মধ্যকার সংঘর্ষ আরও ব্যাপক এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় মিদান এলাকায় সাঁজোয়া যান টহল দিচ্ছে। বিভিন্ন ভবনের ছাদগুলোতে অবস্থান নিয়েছে সরকারপক্ষীয় গুপ্ত বন্দুকধারীরা। সিরিয়ায় ১৬ মাসের আন্দোলন-বিক্ষোভে রাজধানীতে এটাই সবচেয়ে বেশি সামরিক যান ও সেনা সমাবেশ বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে দেশটির বিদ্রোহীরা সোমবার একটি পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় হোমসে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির জয়েন্ট কমান্ড বলেছে, আসাদ সরকারের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরোচিত অপরাধের জবাবে তারা অভিযান শুরু করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়, এফএসএ নগর ও গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত সব নিরাপত্তা স্টেশন ও শাখার ওপর আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে। তারা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে জড়াবে এবং তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাবে। এফএসএ সরবরাহ রুটগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে সব আন্তর্জাতিক সড়ক বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। এখন সিরিয়ার এই সংকটময় মুহূর্তে বিশ্ববাসীর কামনা, যেনো অতিদ্রুত শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান হয়।