দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রেমই তার কাল হলো। ব্যাংক লুটের মূল হোতা হাবিব ওরফে সোহেল কথিত প্রেমিকার তথ্যেই শেষ পর্যন্ত গোয়েন্দা জালে আটক হয়।
যে মানুষটি দীর্ঘ দুই বছর ধরে পরিকল্পনা করছেন সে এতো সহজে ধরা পড়ে যাবেন তেমন ভাবা প্রায় কঠিন। অনেকেই ধরা পড়ার পর অনেকেই বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই এমন কাজ করেছে লুককারী। তানাহলে এতো তাড়াতাড়ি পুলিশ তাকে ধরতে পারলো কি করে?’
কিন্তু কেওই জানতো না আসলে এখানে নারীর ভূমিকা রয়েছে। নারীর কারণে মানুষ অনেক উপরে উঠে যায়, আবার এই নারীরই কারণে বহু নীচে নেমে আসে। ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংক লুটের ঘটনার নায়ক সোহেল রানার ক্ষেত্রেও। ব্যাংক লুটের পরিকল্পনায় নেয়া একের পর এক কৌশল প্রায় আড়াই বছর ধরেই ছিল টপ সিক্রেট। সুকৌশলী সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত ঘুনাক্ষরে টের পায়নি কেও। অবিশ্বাস্য আলামত হিসেবে সুড়ঙ্গপথ ছাড়া রেখে যায় নি আর তেমন কোন ক্লুও। ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সখ্য গড়ে তোলা মানুষজনদের কাছেও রেখে যায় নি নিজের আসল পরিচয়। এত সব কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেও শেষ রক্ষা হয়নি কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংক লুটের দুর্র্ধষ হোতা সোহেলের। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এক সময়ে যাদের সে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল, শেষে তাদের দেয়া তথ্যেই কুপোকাত হয় সে। বেরিয়ে আসে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুটে নেয়ার পেছনের চাঞ্চল্যকর সব কাহিনী।
৩২ বছর বয়সী সোহেল বিবাহিত। জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চণ্ডিপাশা ইউনিয়নের চিলাকাড়া গ্রামেই তার শ্বশুরবাড়ি। তার স্ত্রীর নাম নাকি রাহেলা। অবশ্য স্ত্রী রাহেলার ব্যাপারে বিস্তারিত তেমন কোন কিছু জানা যায়নি এখনও। তবে শ্বশুরবাড়িতে অবস্থানের সময় ব্যাংকের ওই শাখায় বিরাট অংকের লেনদেনের বিষয়টি পরিচিত বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পরই মূলত পরিকল্পনা করতে থাকে এ ব্যাংক লুটের। সোহেল মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করায় এ কাজে তাকে সাহস যোগায় সে অভিজ্ঞতা।
পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী ব্যাংক সংলগ্ন মিনা আক্তারের বাসাটি নানা কৌশলে ভাড়া নেয় সোহেল। এরপর থেকে নানা জনের সঙ্গে নানা ছলে শুরু হয় তার ওঠাবসা। নানা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ছুটে যেতো সে ব্যাংকে। এভাবেই প্রায় দু’বছর আগে তার সঙ্গে পরিচয় হয় ব্যাংকের নিয়মিত লেনদেনকারী ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের ক্ষুদ্র ঋণ কর্মী ইয়াসমিন সুলতানার সঙ্গে। পরিচয়ের সূত্র ধরে এক সময় মোবাইল ফোনে সোহেল প্রেমের ফাঁদে ফেলে জেলার হোসেনপুর এলাকার বাসিন্দা ইয়াসমিনকে। তার মাধ্যমেই পরিচয় হয় ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে। পিতা ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা এমন পরিচয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সখ্য গড়ে তোলে তাদের সঙ্গে। এ কারণে সোহেলের সঙ্গে ইয়াসমিন সুলতানার কথিত এই প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতেন ব্যাংকের এমএলএসএস আবুবকর। অপরদিকে প্রায় দেড় বছর আগে ব্যাংকের সামনে সোহেলের সঙ্গে পরিচয় হয় সাবিনা আক্তার নামে এক কলেজছাত্রীর। কৌশলে সোহেল তার সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
ইয়াসমিন সুলতানা ও সাবিনা আক্তার- এ দু’জনের বরাত দিয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ২১ জানুয়ারি সোহেল তাদেরকে বলেছিল, ‘২৪ ও ২৫ তারিখ আমি একটি জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকবো। এ দু’দিন আমার মোবাইল বন্ধ থাকবে, তোমাদের মোবাইলও বন্ধ করে রেখো।’
তদন্ত সংশ্লিদের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সোহেলের পরিচয় শনাক্ত ও গ্রেফতারের ক্ষেত্রে এই প্রেমের সম্পর্কটিই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় ক্লু হিসেবে বিবেচিত হয়। কথিত এ দুই প্রেমিকার কাছ থেকে পাওয়া যায় সোহেলের বেশ কয়েকটি মোবাইল নম্বরসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সেসব তথ্য ও মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই সন্ধান মিলে সুড়ঙ্গ রহস্যের আলোচিত ব্যক্তি সোহেলের। ওই প্রেমই তার জন্য শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দেখা দিলো।