দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির নির্মম হত্যাকাণ্ডের ২ বছর পার হচ্ছে আজ। দীর্ঘ ২ বছর ধরে হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছেন উভয় পরিবারের সদস্যসহ সাংবাদিক সমাজ।
এদিকে দীর্ঘ ২ বছর ধরে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন করছেন সহকর্মী সাংবাদিক নেতারা। অথচ বিচার তো দূরের কথা, চিহ্নিত করে গ্রেফতারও করা যায়নি হত্যাকারীদের। হত্যাকাণ্ডের কারণও জানা যায়নি আজ পর্যন্ত। ফলে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরিবার, সহকর্মী আর দেশবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আশংকা, হতাশা আর উদ্বেগ। হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে। অপরদিকে সাগর-রুনির পরিবারে চলছে হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে আকুতি।
সাংবাদিক দম্পতির একমাত্র সন্তান মেঘ সে সময় কিছু না বুঝলেও এখন সে বুঝে গেছে, তার মা-বাবা আর কখনো ফিরবেন না। মেঘ এও জেনে গেছে, তার মা-বাবাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। এখন তার মা-বাবার জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই আর করার নেই। এখন সেই বাস্তবতা মেনে নিয়েছে ছোট্ট এই অবোধ শিশু মেঘ। সে সময়ে সময়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে হাত তুলে দোয়া করে, ‘আল্লাহ তুমি মিমি ও বাবাকে ভালো রেখো।’ এমন দৃশ্য দেখে স্বজনরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। ৭ বছর বয়সের শিশু মাহির সরওয়ার মেঘ এখন স্বাভাবিক।
অপরদিকে নিহত সাংবাদিক সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনির ও রুনির মা নুরুন্নাহার মির্জাও হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে আসছেন দীর্ঘ ২ বছর ধরে। তাঁদের একটাই আক্ষেপ, ‘ওরা শুধু আমাদের সন্তান ছিল না, ওরা রাষ্ট্রের সম্পদ ছিল। অথচ সেই সন্তানের খুনিরা আজও গ্রেফতার হলো না! রাষ্ট্রের কাছে আমরা এমন কি-ইবা চেয়েছি। খুনিদের গ্রেফতার ও বিচারই আমাদের একমাত্র প্রত্যাশা। মৃত্যুর আগে যদি সেটি দেখে যেতে পারতাম, তাহলে শান্তি পেতাম।’
এদিকে সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ছবি ও হত্যার ঘটনা ও প্রকাশিত বিভিন্ন পেপার কাটিং নিয়ে ধানমণ্ডির দৃক গ্যালারিতে তিন দিনের এক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। রুনির পরিবারের পক্ষ থেকে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই অংশ আজ যৌথভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আজ সকাল ১১টায় এক স্মরণসভারও আয়োজন করেছে। সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মাছরাঙা টেলিভিশন মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/১/১ নম্বর বাড়ির ৫ তলার একটি ফ্ল্যাটে থেকে উদ্ধার করা হয় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খুনিদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি ওঠে। সরকারের পক্ষ থেকেও দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাছরাঙার বার্তা সম্পাদক ছিলেন সাগর সরওয়ার ও তার স্ত্রী এটিএন বাংলার সিনিয়র প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি আজও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।